হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো এই হাসপাতালটিতে দুজন চিকিৎসক কাগজে-কলমে থাকলেও তারা আসেন না। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, বিদ্যুৎ নেই।
নাসিরনগর উপজেলা সদর থেকে নয় কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকে নয় কিলোমিটার পূর্বে প্রত্যন্ত জনপদ গুনিয়াউক গ্রামে ১৮৬৫ সালে হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। সেসময় পুরো নাসিরনগরে এই একটিই চিকিৎসা কেন্দ্র ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, ‘গুনিয়াউক ১০ বেড হাসপাতাল’-এর দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। ওয়ার্ডগুলো ফাঁকা। একটি ওয়ার্ডে ভাঙা কিছু বেড জড়ো করে রাখা হয়েছে। কোথাও একটিও শয্যা নেই।
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ নার্স মির্জা সোহেল রানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই একর ৯০ শতাংশ ভূমির উপর স্থাপিত এই পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই। নেই সীমানা প্রাচীর। হাসপাতালের ভেতর ঠাঁই নিয়েছে ছিন্নমূল প্রায় অর্ধশতাধ নারী-পুরুষ-শিশু।
“এখানে কাগজে কলমে দুই জন এমবিবিএস ডাক্তার থাকলেও তাদের একজন ঢাকায় এমডি করছেন। আরেকজন অন্যত্র প্রেষণে রয়েছেন।”
সোহেল রানা রোগীদের চিকিৎসা দেন বলে জানান।
চিকিৎসা নিতে আসা হাজি তালেব আলী (৭৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাসিরনগর কিংবা মাধবপুর গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এখানে চিকিৎসা নিতে আসি, কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত ওষুধ পাওযা যায় না।”
নিশ্চিন্তপুর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আহাদ মিয়া বলেন, “আমার পুলাডার সাত দিন ধইরা জ্বর। ইহানো ডাক্তার দেহাইছি। ভাল হইতাছে না। ইহানো সুযোগ থাকলে পুলাডারে ভর্তি কইরা দিতাম।”
নার্স সোহেল রানা বলেন, এখানে নামমাত্র ওষুধ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি তিন মাসের জন্যে ১০ হাজার প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, পাঁচ হাজার টেট্রাসাইক্লিন, তিন হাজার অ্যামোক্সাসিলিন ২৫০, পাঁচ হাজার মেট্রোনিডাজল, তিনশ প্যারাসিটামল সিরাপ, কৃমির ট্যাবলেট পাঁচ হাজার এবং খাবার স্যালাইন দুই হাজার দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
এখানে প্রতিদিন তিন থেকে চারশ রোগী আসে বলে দাবি সোহেল রানার।
সোহলে রারা জানান, এই হাসপাতালে চিকিৎসকসহ কর্মচারীর মোট ১৬টি পদ রয়েছে। এখন আছেন মাত্র চার জন।
“এর মধ্যে দুই জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, একজন এমএলএসএস এবং একজন নৈশ প্রহরী। বাকিরা সব প্রেষণে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত রয়েছেন,” বলেন তিনি।
“চিঠিতে বলা হয়- জনস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যেসব হাসপাতাল চালু করা সম্ভব হয়নি সে হাসপাতালগুলো সরকারিভাবে চালু করা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে চালু করতে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রেরণের জন্যে সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হলো।”
চিঠি পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ইতিমধ্যে পাঠিয়েছেন বলে সিভিল সার্জন জানান।
গত রোববার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে হাসপাতালের অভ্যন্তরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
শিগগিরই গুনিয়াউক ১০ বেডের পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করা সম্ভব হবে আশা রেখে তিনি এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।