কেউ ব্যাংক ঋণের টাকায়, কেউবা গরু বিক্রি করে বোরো চাস করেছিলেন। বানের জলে তলিয়ে গেছে তাদের স্বপ্নের ফসল। সব হারিয়ে সামনের দুর্দিনের আশঙ্কায় কাটছে দিন-রাত।
জেলার ১৪৫টি হাওরে প্রায় ৫৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানিয়েছে।
সিলেট সদর উপজেলার নীলগাঁওয়ের ষাটোর্ধ্ব কৃষক আব্দুল রেজাক তার শেষ সম্বল একটি গরু বিক্রি করে তিন একর জমিতে বোরো চাষ করেছিলেন। সব ফসল হারিয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন এই বৃদ্ধ।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রেজাক বলেন, “স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার। শেষ সম্বল একটি গরু বিক্রি করে বোরো ফসল বুনেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। হঠাৎ পানি এসে নষ্ট হয়ে গেছে তিন একর জমির ফসল।
“এখন সারাবছর খাব কী, এনিয়ে চিন্তায় আছি। সরকার যদি একটু সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে দুবেলা খেতে পারব, নইলে না খেয়েই মরতে হবে।”
নলকট গ্রামের তৈমুছ আলী কৃষি ব্যংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছিলেন পাঁচ একর বোরো ফসল। ফসল চলে গেছে পানির নীচে, এখন ঋণের চাপ সইতে পারছেন না তৈমুছ। দুচোখে তার ঘোর অন্ধকার।
তৈমুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধান তো পানিতে ভেসে চলেই গেছে, এখন ব্যাংক থেকে ঋণ পরিশোধের চাপ আসবে। ভেবেছিলাম ফসল তুলে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করব। এখন সবই গেছে।”
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় অকাল বন্যায় বোরো ফসল হারিয়েছেন দুই লাখ ১২ হাজার ৫৭০ জন কৃষক। এই ফসলই ছিল দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের একমাত্র অবলম্বন। ফসল হারিয়ে তারা পড়েছে ঘোর বিপদের মুখোমুখি।
সিলেট কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেম বলেন, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেট জেলার ১৪৫টি হাওরের ফসল তলিয়ে গেছে।
“ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এবার ৮৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ হয়, যার মধ্যে নষ্ট হয়েছে ৫৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বোরো ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ রোপন মৌসুমে বেশি জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে তিনি জানান।
হাশেম জানান, গত বছর ৪৭ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়। এবার ৬৭ হাজার হেক্টর জমি আবাদের আওতায় নিয়ে আসা হবে, যাতে কৃষক আউশ চাষাবাদ করে বন্যা ও অতিবৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে। সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করবে।