বুধবার মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর আসামির উপস্থিতিতে ওই মামলায় রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে চুয়াডাঙ্গার ডিলাক্স পরিবহনের চালক জামিরকে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় বেপরোয়া চালনার কারণে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য (পরিকল্পিত নরহত্যা নয়) দোষী সাব্যস্ত করে আদালত তাকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।
পাশাপাশি তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
এছাড়া দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারায় জামিরকে তার ‘দুষ্কর্মের’ জন্য ক্ষয়ক্ষতির কারণে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সাজার আদেশ দিয়েছে আদালত।
রায় ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গায় সব রুটে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দেয় শ্রমিকরা।
বাস শ্রমিক তাহাজ আলী বলেন, “কোনো দোষ ছিল না চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের চালক জামিরের। তারপরও তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আমরা মেনে নিতে পারি না।”
চুয়াডাঙ্গা বাস ট্রাক সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম জেনারেল বলেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করিনি। আজ (বুধবার) রাতে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“তবে শ্রমিকরা বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছে এবং চলাচলেও বাধা দিচ্ছে।”
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি যাতে খারাপ না হয় সে জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া এভাবে চলাচলে বাধা দিয়ে আদালত অমান্য না করে তাদের আইনের পথে এগুনোর পরমর্শ দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালের ১৩ অগাস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মাইক্রোবাস আরোহী তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মুক্তির গান ও মাটির ময়না চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তখন তার নতুন ছবি 'কাগজের ফুল' এর শুটিং শুরুর কাজ করছিলেন। সাংবাদিকতার সাবেক শিক্ষক মিশুক মুনীর তখন টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কাগজের ফুল' এর লোকেশন দেখতেই তারা মানিকগঞ্জে গিয়েছিলেন।
তারেক মাসুদের প্রোডাকশন ম্যানেজার ওয়াসিম ও কর্মী জামাল এবং মাইক্রোবাসের চালক মুস্তাফিজও নিহত হন ওই দুর্ঘটনায়।
আহত হন ওই মাইক্রোবাসে থাকা তারেকের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, চিত্রশিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেকের প্রোডাকশন ইউনিটের সহকারী সাইদুল ইসলামও।