সুরঞ্জিতকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ সুনামগঞ্জ

চার দশকের বেশি সময় ধরে জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করা করে আসা প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2017, 08:05 AM
Updated : 6 Feb 2017, 07:46 AM

রোববার ভোর রাতে অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ানের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দলের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিরাইয় উপজেলা সড়কে সুরঞ্জিতের বাড়িতে ভিড় করেন।

সকালেও সেখানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে আসতে দেখা যায়। সুরঞ্জিতের স্মৃতির কথা স্মরণ করে অনেককেই এসময় কাঁদতে দেখা যায়।

স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী নারায়ণ দাস বলেন, “সেন দাদা আমাদের এলাকার বার বার নির্বাচিত এমপি ছিলেন। সব মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তার মৃত্যু মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।”

সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য; স্বাধীন দেশ প্রায় সব সংসদেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোরে এই সংসদ সদস‌্যের মৃত‌্যু হয়।

সোমবার সকাল ১০টায় সিলেটে প্রবীণ এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মরদেহ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে তার গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। বিকাল ৩টায় সেখানেই হবে তার শেষকৃত্য।

দিরাই আওয়ামী লীগের তিন দিনের শোক

দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছাব উদ্দিন সরদার বলেন, “সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক হারিয়েছি, আমরা দিরাই-শাল্লার মানুষ শোকে পাথর হয়ে গেছি। তাই তার মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।”

সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জন্য দিরাই-শাল্লার মন্দিরগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের উপজেলা সহ-সভাপতি সিরাজ-উদ-দৌলা তালুকদার।

তিনি বলেন, “সুরঞ্জিত বাবু শুধু সুনামগঞ্জ বা সিলেটের নেতা ছিলেন না, ছিলেন জাতীয় নেতা। এমন নেতা আর সৃষ্টি হবে না। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।”  

আরেক সহ-সভাপতি সুহেল আহমদ জানান, চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সুরঞ্জিত ছিলেন সবার ছোট। তিন ভাই আগেই মারা গেছেন। একমাত্র বোন কলকাতায় বসবাস করছেন।

“আমাদের নেতার মৃত্যুতে শুধু দলীয় নেতাকর্মীরা নয় সব শ্রেণিপেশার মানুষ শোকস্তব্ধ। সাধারণ মানুষের কান্না প্রমাণ করে, তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।”

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায় বলেন, গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করা সুরঞ্জিত ব্যক্তি জীবনেও অসাম্প্রদায়িকতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন।

“তার মতো রাজনীতিকের মৃত্যুতে দিরাই-শাল্লার প্রকৃতিও নিরব হয়ে গেছে। তিনি শুধু সুনামগঞ্জের নেতা না, জাতীয় নেতা হিসেবে দেশের গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি যা করেছেন, তা ব্যাখ্যা করা যাবে না।”