সিলেটের তারাপুর চা বাগানের বন্দোবস্ত নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতির মামলার রায় এবং সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য সিলেটের ব্যবসায়ী রাগীব আলীকে আদালতে আনা হয়েছে।
Published : 02 Feb 2017, 11:50 AM
রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। স্মারক জালিয়াতির মামলায় তারা দুজনই আসামি।
আসামিরা হাজির হওয়ার পর সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো প্রথমে সরকারের হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও প্রতারণা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। এদিন মোট ১৪ জনের সাক্ষ্য শোনার কথা রয়েছে আদালতের।
এ মামলায় দিনের শুনানি শেষ হলে দুপুরের পর কোনো এক সময় স্মারক জালিয়াতি মামলার রায় ঘোষণা করবেন বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো। বুধবার দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের রায়ের জন্য দিন রাখেন তিনি।
এ মামলায় তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয়েছে রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর সিলেটের এই ধনাঢ্য ব্যক্তি পালিয়ে ভারতে চলে গেলেও গতবছর শেষদিকে তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
মামলা বৃত্তান্ত
তারাপুর চা বাগান নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতি এবং সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করে।
এর বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের শুরুতে তার নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গত ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে তারাপুর চা-বাগান দখল করে গড়ে ওঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই আদেশের পর ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
মামলা হওয়ার ১১ বছর পর সিলেটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান গত ১০ জুলাই ওই দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী ও তার ছেলেকে আসামি করা হয়। আর প্রতারণা মামলায় রাগীব আলী, তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত, রাগীব আলীর আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ, রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাই, জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা কাদিরকে আসামি করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা তারাপুর চা-বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।
ওই দুই মামলায় গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সিলেটের আদালত। ওই দিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান তিনি।
গতবছর ১২ নভেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় লুকিয়ে দেশে ফেরার চেষ্টার ২৪ নভেম্বর ভারতে গ্রেপ্তার হন রাগীব আলী।
ওই দিনই তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিচার।
আত্মসাত ও প্রতারণা মামলার আসামিদের মধ্যে রাগীব আলী, আবদুল হাই ও মোস্তাক মজিদ কারাগারে রয়েছেন। জামিনে আছেন সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্ত। আর রাগীবের জামাতা আবদুল কাদির ও মেয়ে রুজিনা পলাতক।