রংপুরে আলুক্ষেতে পচন, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে রংপুরের বিভিন্ন এলাকায় আলুক্ষেতে নাভিধসা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে; কৃষি বিভাগের সহযোগিতায়ও রোগ নিরাময় না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার চাষিরা।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2017, 08:33 AM
Updated : 16 Jan 2017, 10:25 AM

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এসএম আশরাফ আলী বলেন, মেঘলা আকাশ, কুয়াশা আর মাঝেমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে আলুক্ষেতে নাভিধসা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

“এ রোগে প্রথমে আলুগাছের পাতা, ডগা ও কাণ্ডে ছোট ভেজা দাগ পড়ে। দাগটা ক্রমে বড় হয়ে গোটা পাতা, ডগা ও কাণ্ডের কিছু অংশ ঘিরে ফেলে। ধীরে ধীরে আলুগাছ কুঁকড়ে গিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করে।”

রোগটা ইংরেজিতে ‘লেট ব্লাইট’ নামে পরিচিত বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ আলী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, রোগের প্রতিষেধক বিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের সচেতন করার জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে গোটা জেলায় লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, ওষুধ দিয়েও আলুর পচন ঠেকানো যাচ্ছে না।

তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের প্রামাণিকপাড়ার তারাজুল ইসলাম বলেন, “দুই একর জমিতে আলু চাষ করেছি। নাভিধসা রোগে দেড় একরের বেশি জমির আলুগাছ মরি গেইচে।

“ওষুধ দিয়াও আলু রক্ষা করব্যার পারি নাই। ৪৫ হাজার টাকা পানিত গ্যালো।”

মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বৈরাগীগঞ্জ এলাকার নুর হোসেনেরও একই অভিযোগ।

তিনি বলেন, “প্রায় ৬৫ হাজার টাকা খরচ করচি। পাঁচ একর জমির আলুগাছ বাঁচপার পারি নাই। ক্ষেতের সউগ আলুগাছ মরি গেইচে।”

পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের দেউতি এলাকার তবারক আলী মাস্টার গত বছর ভালো দাম পেয়ে এবার ১০ একর জমিতে আলুচাষ করেছেন।

“এ বছর নাভিধসা রোগে ইতোমধ্যেই এক একরের বেশি জমির আলুগাছ পচে গেছে। ওষুধ ছিটিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থার উন্নতি না হলে ১০ একর জমির আলুক্ষেত পুরোটাই মার খাবে,” বলেন তিনি।

রংপুরে চলতি মৌসুমে ৫৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে জানিয়ে কৃষি কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলেন, এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর আক্রান্ত হয়েছে।

ইতোমধ্যেই অনেকের ক্ষতি হয়ে গেলেও পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, রোদ থাকলে সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

জেলার তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা উপজেলায় নাভিধসা রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।