জেলায় জেলায় আ.লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

চলতি দশম সংসদ নির্বাচনের দিন ৫ জানুয়ারি সারাদেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি; দুই বিরোধী পক্ষের মধ্যে অন্তত এক জায়গায় ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা; পুলিশ বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে কোথাও কোথাও।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2017, 09:32 AM
Updated : 5 Jan 2017, 09:36 AM

বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দিনটিকে বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত‌্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে; যেখানে আওয়ামী লীগ পালন করছে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

বরিশালে সংঘর্ষে আ.লীগ-বিএনপি

বরিশাল নগরীতে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতির সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

বিএনপির অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। অন‌্যদিকে ক্ষমতাসীনরা এ অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনাটিকে বিএনপির নাটক বলেছে। 

বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার গোলাম রউফ জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর সদর রোড তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিতে থাকে। একই সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও কিছুটা দূরে সদর রোডে অবস্থান নেয়।

“এক পর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিক থেকে একটি বোতল ছুড়ে মারা হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিকে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ‍শুরু হয়।”

বরিশাল

বরিশাল

সংঘর্ষের মধ‌্যে ছাত্রলীগের কর্মীদের লাঠি হাতে চড়াও হতে দেখা যায়। কিছু সময় পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে গোলাম রউফের ভাষ‌্য।

এরপর দলীয় কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় মহানগর বিএনপির সহশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা খানম রোজি ও বিএনপির কর্মী বাবুসহ কয়েকজনকে টানাহেঁচড়া করে ছাত্রলীগের লোকজন।

দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত‌্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসা বিএনপি ঢাকা বাদে সারা দেশে বৃহস্পতিবার কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। অন‌্যদিকে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন করে আসা আওয়ামী লীগ আলাদা কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছিল, জনগণ বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেবে না।

সংঘর্ষের পর বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।”

এ ঘটনায় তাদের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

অন‌্যদিকে ঘটনার সময় উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, “পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিএনপি হামলার নাটক সাজিয়েছে। তারা নিজেরই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ওপর দায় চাপাচ্ছে।”

আহতদের মধ‌্যে আজাদ নামে একজনকে দুপুরে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তার দলীয় পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ‌্য পাওয়া যায়নি।

ফরিদপুরে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল

ফরিদপুরে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন। সকাল সাড়ে ৯টায় শহরের গোয়ালচামট রকিবউদ্দিন পৌর মার্কেটের সামনে থেকে কালো পতাকা নিয়ে একটি মিছিল বের হয়।

ফরিদপুর

ফরিদপুর

বিএনপি নেতা জুলফিকার হোসেন জুয়েলের নেতৃত্বে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন ট্রাক স্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সভা হয়।

সভায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হাবিবুর রহমান হাফিজ, সিদ্দিকুর রহমান, আশরাফ হোসেন প্রমুখ।

এদিকে জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে থেকে শহর বিএনপির একটি মিছিল বের হলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।

সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগের একাংশের গণতন্ত্র রক্ষা দিবস পালন

সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি দেশের ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করেছে আওয়ামী লীগ।  দুপুর সাড়ে ১২টায় সাতক্ষীরা শহরে আওয়ামী লীগ শোভাযাত্রা বের করে।  এতে নেতৃত্ব দেন সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি। ছিলেন মহিতুল আলম, ফিরোজ কামাল শুভ্র, আইনজীবী আজহার হোসেন, শেখ হারুন উর রশিদ, নূরুল হক, মুশফিকুর রহমান মিল্টন প্রমুখ।

সিলেটে পুলিশি বাধায় বিএনপির মিছিল পণ্ড

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচির আয়োজন করে। বেলা ১১টায় নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

মিছিল করতে না পেরে আম্বরখানার দিকে চলে যান নেতাকর্মীরা। সেখানে পুনরায় মিছিলের চেষ্টা করলে আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি নেতারা।

ফলে মিছিল না করেই ছত্রভঙ্গ হয়ে ফিরে যান তারা।

পুলিশ মিছিল করতে না দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, “সরকার পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।

“রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাকর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হত্যা করছে।”

তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা।

সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নুরুল হুদা আশরাফী বলেন, বিএনপি মিছিলের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি। ফলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কায় মিছিল করতে দেওয়া হয়নি।

আম্বরখানা-চৌহাট্টা-জিন্দাবাজারসহ নগরীর প্রধান মোড়গুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে তিনি জানান।

খাগড়াছড়িতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিএনপির অনুষ্ঠান

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাড়ম্বরে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করেছে খাগড়াছড়ি বিএনপি। খাগড়াছড়ি গণপূর্ত সড়কে প্রথমে কালো পতাকা মিছিল ও পরে সমাবেশ হয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি প্রবীণচন্দ্র চাকমা, সহ-সভাপতি কংচাইরী মারমা ও সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরী  বক্তব্য দেন।

খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা

কেক কাটার মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্তমান সরকারের তিন বছর পূর্তি ও গণতন্ত্রের বিজয় দিবস পালন করা হয়েছে।

সকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে টাউন হল চত্বরে আলোচনা সভা হয়।

ময়মনসিংহে পুলিশি বাধায় পণ্ড বিএনপির মিছিল

দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন বাজার মোড় থেকে দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়।

পরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “বর্তমান অবৈধ সরকার গণতন্ত্র রক্ষার নামে বারবার গণতন্ত্র হত্যা করে চলছে। জনগণ একদিন এর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেবে।”

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ অভিযোগ করেন, “গণতন্ত্র হত্যা দিবস বানচাল করার জন্য সরকারের নির্দেশে রাতভর পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে; নেতা-কর্মীদের হুমকিও দিয়েছে কোনো কর্মসূচি না করার জন্য।”

অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি করেছে পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, “ওয়ারেন্টভুক্ত নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। কোনো নেতাকর্মীকে কর্মসূচি না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়নি।”