সাঈদ নাম নিয়ে ঝিনাইদহে ছিলেন নিবরাজ

ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে চিহ্নিত হামলাকারী নিবরাজ ইসলামের লাশ উদ্ধারের পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে এই তরুণ গত ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2016, 01:25 PM
Updated : 25 July 2016, 10:19 AM

এই সময়কালে নিবরাজ ঝিনাইদহের একটি মেসে ‘সাঈদ’ পরিচয় দিয়ে ছিলেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

ঝিনাইদহ সদরের সোনালীপাড়ার ওই মেসে নিবরাজকে দেখার কথা স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, গুলশানে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে আসার পর তারা একজনকে নিবরাজ বলে চিনতে পারেন, তবে তারা জানতেন তার নাম সাঈদ।

গুলশানে হামলাকারী অন্তত তিনজন বেশ কিছু দিন ধরে ঘরছাড়া ছিলেন বলে তাদের পরিবারগুলো পরে জানায়। এর ছয় দিনের মধ্যে শোলাকিয়ায় হামলাকারী তরুণও নিখোঁজ ছিলেন বলে তথ্য বেরিয়ে আসে।

গত ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলার পর নিবরাজের ঢাকায় থাকা পরিবারকে উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে খবর আসে, তিনি এ বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি একটি চিরকূট লিখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর জঙ্গি সংগঠন আইএসের তরফে পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করা হয়। পরদিন কমান্ডো অভিযানে নিহতদের মধ্যে নিবরাজকেও পাওয়া যায়। 

আইএসের তরফে দেওয়া নিবরাজের ছবি

নিবরাজের মতো এই তরুণরা হামলার প্রশিক্ষণ কোথায় নিয়েছিলেন, কাদের সংস্পর্শে ছিলেন- তা তাদের নিখোঁজ থাকার সময়কার অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন।

নিবরাজের পরিবারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলালে দেখা যায়, ঘর ছাড়ার পর তার অবস্থান ছিল ঝিনাইদহে, শহরের হামদহ সোনালী পাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কওছর আলীর মালিকানাধীন বাড়ির মেসে।

ওই মেসের চারটি কক্ষে মোট আটজন থাকতেন। তাদের মধ্যে সাঈদ বা নিবরাজও একজন। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে তারা মেস ছেড়ে যান, তারপর আর ফেরেনি। ঈদের ছয় দিন আগে গুলশানে হামলা হয়।

ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র (নাম প্রকাশ করা হল না) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার মাস আগে সে (নিবরাজ) এই ছাত্রাবাসে (মেসে) উঠেছিল। পাশের মাঠে নিয়মিতই আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলত, ভালো ইংরেজি বলত সে।

“তখন আমরা জানতাম তার নাম সাঈদ। বলেছিল যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এখানে উঠেছে। এখন ছবি দেখে বুঝলাম ওই সাঈদই নিবরাজ।”

ঢাকার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নিবরাজ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পর পড়তে যান মালয়েশিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে থেকে গত বছরের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসার কয়েকমাস পরই ঘর ছেড়ে যান।

নিবরাজ ইসলামের ফেইসবুক পাতায়ও ছিল তার ফুটবলপ্রেমের ইঙ্গিত

শুরু থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে আসা নিবরাজের ফুটবলে আগ্রহের বিষয়টি তার ফেইসবুক পাতায়ও উঠে আসে।

নিবরাজ যে মেসে ছিলেন, তার মালিক কওছর আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঈদের ছুটিতে ওই মেসের আট ছাত্র চলে গিয়েছিল। তারপর আর ফেরেনি।

চার মাস আগে সাঈদ (নিবরাজ)সহ দুজনকে পাশের মসজিদের ইমাম মো. রোকনুজ্জামান মেসে তুলেছিলেন বলে জানান বিলকিস।

“ইমাম রোকনুজ্জামান  দুজনকে মেসে তুলেছিলেন। তারা কী করত, কোথা থেকে এসেছিল, আমরা কিছু জানতাম না।”

বাড়ির মালিক কওছর আলী ও ইমাম রোকনুজ্জামানের খোঁজ চাইলে বিলকিস বলেন, ঈদের আগের রাতে পুলিশ পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে বাড়ি ও মেস তল্লাশি করে। তারা যাওয়ার সময় কওছার ও তাদের দুই ছেলে বেনসার আলী ও বেনজির আলী, ইমাম রোকনুজ্জামান এবং সাব্বির নামে স্থানীয় এক হাফেজকে ধরে নিয়ে যায়।

তবে ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আলতাফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বলেন, তারা এদের কাউকে আটকের বিষয়ে কিছু জানেন না।  

নিবরাজ ইসলাম

ইমাম রোকনুজ্জামান গত বছর থেকে স্থানীয় ওই মসজিদে ইমামতি করে আসছেন। তিনি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাইড়া গ্রামের আইনুদ্দিনের ছেলে।

ওই মসজিদের সভাপতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি শরাফত হোসেন জোয়ার্দ্দার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “২০১৫ সালে মসজিদের ইমাম নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলাম। চারজন আবেদন করলে আমরা পরীক্ষা নিই। রোকনুজ্জামান পাস করলে তাকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।”

নিবরাজসহ কয়েকজনের ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর আরও ১০ জন নিখোঁজ যুবকের তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এদের জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার সন্দেহও করছেন গোয়েন্দারা।

এই তালিকা প্রকাশের পর আরও কিছু তরুণ ও যুবকের  নিখোঁজ থাকার খবরও তাদের পরিবারগুলো দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ সদর থানায় এমন এক তরুণের সন্ধান চেয়ে সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।

১৭ বছর বয়সী হাসান আলী নামে দশম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর মা সুন্দরী বেগম বলছেন, এক বছর ধরে তার ছেলে নিখোঁজ। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিখোঁজদের বিষয়ে জানাতে বলায় তিনি জিডি করেছেন।