সৌদির বাথা মার্কেটের আগুন: পুড়লো প্রবাসী ব্যবসায়ীদের ঘাম

রোজার ঈদকে সামনে রেখে দোকানে নিজেদের সব পুঁজি নিয়ে নতুন মালামাল তুলেছিলেন সৌদি আরবের বাথা মার্কেটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা, গত সপ্তাহের মঙ্গলবারের আগুন তার সবটুকু পুড়িয়ে দিয়েছে।

মো. শফি উল্লাহ, সৌদি আরব থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2017, 04:03 AM
Updated : 24 June 2017, 04:03 AM

সব খুঁইয়ে প্রবাসী এসব ব্যবসায়ীরা ভিনদেশে পড়েছেন চরম সঙ্কটে। কবে নাগাদ আবার ঘুরে দাঁড়াবেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িরা ও তাদের কয়েক হাজার কর্মচারী, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

বাথা মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম বড় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরবাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়, মোহাম্মাদ আজিজ তালুকদার। তিনি জানান, ওই মার্কেটে মোট ২১৫টি দোকানের মধ্যে ৭০টি বাংলাদেশিদের মালিকানাধীন।    

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার মোহাম্মাদ আজিজ তালুকদারের তিনটি দোকান পুড়ে গেছে

আজিজ তালুকদার বলেন, “আগুনে আমার তিনটি দোকান পুড়ে গেছে। এরমধ্যে দুইটি বোরখার দোকান ছিলো এবং একটি কাপড়ের। মোট ৭ লাখ রিয়াল (সৌদি মুদ্রা) বা ১৫ কোটিরও বেশি টাকার মালামাল পুড়েছে।”

তিনি জানান, মার্কেটের বেশিরভাগ দোকানেই বাংলাদেশিরা কাজ করেন, তাদের সংখ্যা এক হাজারের কিছুটা বেশি হবে। মঙ্গলবারের দুইঘণ্টার আগুন এসব কর্মচারীদেরও বিদেশের মাটিতে বেকার করে দিয়েছে ঠিক ঈদের আগে।

পুড়ে যাওয়া মার্কেটে গিয়ে দেখা হলো ওইদিনের আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের মালিক ফরিদউদ্দিনের সাথে।  বাথা মার্কেটের একটি বাচ্চাদের জামা-কাপড়ের দোকানের মালিক ছিলেন তিনি।

আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে নিজের দোকানের সামনে ফরিদউদ্দিন

আবেগ ভরা কণ্ঠে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রতিবেদককে বলেন, “একটা সুতাও বের করতে পারি নাই। সব জিনিসপত্র ছাই হয়ে গেছে। এই মার্কেটটি ঘিরে কোটি টাকার ব্যবসা হত।

“দোকানের ক্যাশবাক্সে ৪৮ হাজার রিয়াল ( সৌদিমুদ্রা) ছিল। ইফতার করতে বাসায় যাওয়ায় সেগুলোও উদ্ধার করতে পারিনি । এসে দেখি দাউদাউ করে জলছে তিলেতিলে গড়া দোকান।”

ফরিদ জানান, ক্যাশবাক্সে রাখা ওই নগদ রিয়ালসহ আগুনে মোট ২ লাখ রিয়ালের মাল পুড়ে গেছে তার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ কোটি ২৯ লাখ টাকার সমপরিমাণ।

সৌদির বাথা মার্কেটটির মূলক্রেতার মধ্যে ৯০ শতাংশই প্রবাসী। আর প্রবাসী ক্রেতাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছেন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। ঈদ সামনে রেখে মালামাল তো বটেই মার্কেটের গেইটও ব্যবসায়ীরা সাজিয়েছিলেন আলোকসজ্জায়।

ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া মার্কেটের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন এক ব্যবসায়ী

ক্রেতা আকর্ষণের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছিলো পুরস্কার। তারা জানালেন, পুরো বছরের লাভ ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েও কেউ কেউ অর্থলগ্নি করেছিলেন। এদের মধ্যে দু’জন হচ্ছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ফয়জুললাহ এবং আজিজুললাহ।

তারা জানান, ঈদ বাজারে বেচাকেনা করে মালামাল গুছিয়ে তারা ইফতার করতে বাসায় যান। ইফতারের পরে আবার ঈদের বাজারে বেচাকেনার জন্য আসতেই খবর পান সবকিছু পুড়ে ছাই হয়েছে।

একই মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী দুই সহোদর করিম ও সোহাগ। তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান,নিজেদের পুঁজি না থাকায় স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঈদবাজার ধরতে ১লাখ রিয়ালের কাপড় কিনেছিলেন তারা। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেছে তাদের দোকান।

আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাথা মার্কেট

সমিতির ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবে আর কীভাবেই জীবন চালাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।

এদিকে মঙ্গলবার আগুন নেভার পরপরই ঘটনাস্থলে যান বাংলাদেশ দূতাবাস  শ্রম কর্মকর্তা সারওয়ার আলম। তিনি ব্যবসায়ীদের সান্ত্বনা দিয়ে সব ধরনের আইনি সহযোগিতা দিতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেন।

আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাথা মার্কেট

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশি দোকানগুলোর কোনটিরই বীমা আছে কি না সন্দেহ। কাজেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!