সাধারণত স্টেশনে গাড়ি রেখে ট্রেনে যাই। আজ স্টেশনে যাওয়ার পথে দেখলাম স্কুল ইউনিফর্ম পরা একটি কিশোর বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটছে। ছেলেটিকে চিনতে পেরে আমি গাড়ি থামিয়ে ছাতা হাতে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
ধ্রুব, স্কুলে যাচ্ছ বুঝি? ইয়াপ, আঙ্কেল। তার মাথার উপর ছাতা ধরে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি প্রতিদিন হেঁটে হেঁটেই ট্রেন স্টেশনে যাও? নো, আই ক্যাচ বাস ফ্রম মাই হাউস, দেন ক্যাচ ট্রেন, বাট আই মিসড বাস টুডে অ্যান্ড ওয়াকিং টু স্টেশন। আমি বললাম, চলো তোমাকে স্টেশন পর্যন্ত লিফট দেই।
ধ্রুবের মাথা ওপর ছাতা ধরে নিজের স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো। কতো দিন ব্যাগে স্কুল-ছাতা রেখেও ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরেছি! ছাতার ওপর জমা হওয়া জল ঝেড়ে ভিজিয়ে দিয়েছি বন্ধুদের। রহমান ছাতা, মুন ছাতা, শংকর ছাতা ও চায়না ছাতা ছিলো সেগুলো। একেকটার কি উজ্জ্বল রঙ! ফেলে আসা দিনগুলো, বুকের ভেতর আজও রঙিন শৈশব ডাকে শুধু আয়, আয়।
ধ্রুব আমার সাথে স্টেশন পর্যন্ত যেতে রাজি না হলেও অনেকটা জোর করে তাকে গাড়িতে নিয়ে এলাম। কথায় কথায় জানতে পারলাম ট্রেন ধরে গেলেও তার স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। আজ তাদের ক্লাসের এস্কারশনে প্যারামাটা যাওয়ার কথা। আমি গাড়ি ঘুড়িয়ে ধ্রুবর স্কুলের দিকে রওনা হলাম। ওকে স্কুল গেটে পৌঁছে দিয়ে আমি স্টেশনে গাড়ি রেখে ট্রেনে উঠলাম।
বিদেশে একজনের আয়ে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর ব্যাপার। আমার স্ত্রী, ছেলের স্কুলে আনা নেওয়ার সাথে সময় মিলিয়ে চাকরি করার সময় পায়নি। তাই আমাদের পারিবারিক সচ্ছলতা না থাকলেও যখন ছেলেটা মার সাথে স্কুলে যেতে আসতে পারে আর বাসায় এসে মাকে কাছে পায় তখন আমাদের স্বামী স্ত্রীর পারিবারিক অসচ্ছলতার কষ্ট একেবারে মন থেকে মুছে যায়।
লেখক: প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |