চোখ মানুষের মূল্যবান সম্পদ। চোখ শুধু পথ দেখার জন্য নয়, এই চোখ নাকি মনের কথাও বলে!
Published : 28 Apr 2017, 02:37 PM
এই চোখই যদি নিরাপদে না থাকে, পথ চলা তো দূরে থাক, মনের কথাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রসায়ন ল্যাবে চোখের নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে বলছি।
রসায়ন বিষয়টি প্রাণের সাথে কতটুকু ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তা আমাদের দেশিয় অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কারণে উল্লেখযোগ্য গবেষণা না থাকার কারণে এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় পিছিয়ে থাকলেও প্রতি বছর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুত করছে।
রসায়ন বিষয়ে দেশিয় স্মাতক (সম্মান) ডিগ্রি বিশ্বব্যাপী সমাদ্রিত হলেও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) বিশ্বের সব জায়গায় সমাদৃত নয়। এ কারণে অসংখ্য ছাত্রছাত্রীকে পিএইচডি করার জন্য দেশিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করার পরও ইউরোপ, আমেরিকা বা এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আবার স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) করার প্রয়োজন পড়ে।
সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন শিক্ষক রয়েছেন যারা ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে উচ্চতর গবেষণার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেরেন। আবার বিদেশেও অনেকের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। উন্নত দেশের রসায়ন ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তা বিষয়ে সবাই কম-বেশি জানেন। উন্নত দেশের মতো রসায়ন ল্যাবে নিরাপত্তার সব দিক অর্থনৈতিক কারণে নিশ্চিত করা না গেলেও, কিছু বিষয় শিক্ষকদের সুনজরে নিশ্চিত করা যায়।
আমাদের দেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মাতক (সম্মান) রসায়ন ল্যাবে নিরাপত্তা বিষয়ক শুধু একটি নিয়ম মানে, তা হলো- ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় ল্যাবকোট পরিধান করা। অথচ গত চার বছরে আমি আমেরিকায় আমার দেখা কোন আন্ডারগ্রেড রসায়ন ল্যাবে কাউকে ল্যাবকোট ব্যবহার করতে দেখিনি। শুধু রিসার্চ ল্যাবোরেটরিতে ল্যাবকোট পরা হয়।
অনার্স প্রথম বর্ষের সল্ট অ্যানালাইসিস আর আগুনের শিখা নিয়ে কাজ থেকে শুরু করে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত রসায়ন বিভাগের সব বর্ষেই কম-বেশি কেমিকেল নিয়ে কাজ করা হয়। ১২এম ঘনমাত্রার এসিড নিয়ে কাজ করা হয় কি না জানি না, তবে নূন্যতম ০.৫এম ঘনমাত্রার এসিড তো থাকেই। নানা ধরণের ক্ষারের ব্যবহার ছাড়াও অন্যান্য কেমিকেলের ব্যবহার হয় সব সময়।
এসিড-বেইস ছাড়াও যে কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের একটি ফোঁটা চোখে পড়লে যে কারো চোখে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে মুহূর্তেই। এমন পরিস্থিতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চোখে পানি দেবার ব্যবস্থা দারিদ্রতার কারণে আমাদের নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে দেখেছি ল্যাবকোট না পরলে অনেক শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের ল্যাব থেকে বের করে দিতেন। এই ল্যাব কোট দিয়ে আমরা কোন মূল্যবান অঙ্গটির প্রতিরক্ষা করি? আমাদের শার্ট, প্যান্ট, নাকি চামড়া? তাহলে, আমাদের চোখ দুটিকে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায়, এই নিয়ে কি শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মাঝে কোন সচেতনতা আছে?
এক ফোঁটা এসিড চামড়ায় পড়লে কী হবে আর চোখের মণি বা চোখের নিচের স্পর্শকাতর চামড়ায় পড়লে কী হবে একবার কি কেউ অনুমান করতে পারেন? আরেকটি ব্যাপার হলো, কোন কারণে যদি চোখে মুখে কেমিকেল পড়েই যায় উন্নত দেশের মতো তৎক্ষণাৎ চোখেমুখে নিরবিচ্ছিন্ন পানি মারার জন্য যে অবকাঠামো দরকার সেটা আমাদের দারিদ্রতার কারণে নাই একথা সত্য, তবে ল্যাবে নিরাপত্তার জন্য খোলা স্যান্ডেল না পরে সম্পূর্ণ পা ঢেকে রাখে এমন জুতো পরে আসার নিয়ম সহজেই করা যায়।
আমাদের দেশে যে কোন রসায়ন ল্যাব শুরুর আগে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়ম কানুন জানার জন্য কোন পরীক্ষাও নেই, অথচ কেমিকেল নিয়ে কাজ করার আগে সব ছা্ত্রের জীবন রক্ষার্থে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন।
আর সাধারণ সেফটি গ্লাস গুলো চারপাশে খোলা থাকে, তবে কেমিক্যাল সরাসরি চোখে যেতে পারবে না, তবে পাশ দিয়ে যেতে পারবে। আমেরিকায় রসায়ন ল্যাবগুলোতে সেফটি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এখানে, নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন খুব কঠোরভাবে মানা হয় এবং সবগুলো নিয়ম না মানলে ল্যাবে কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়া হয় না।
আরো কিছু জরুরি নিয়ম হলো, মেয়েরা ল্যাবে চুল ছেড়ে আসতে পারবে না, এমন ভাবে প্যান্ট পরতে হবে যা টাকনি পর্যন্ত ঢেকে রাখে, যাতে কোন ক্যামিক্যাল চামড়া স্পর্শ না করে। প্যান্টে কোন ফ্যাশনজনিত ছিদ্র থাকা চলবে না, ল্যাবে কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার চলবে না, মেয়েদের চুল সব সময় বেণী করে বা বেঁধে আসতে হয়।
রসায়ন বিষয়টিকে বলা হয় সেন্ট্রাল সাইন্স, কারণ এটি ডাক্তারি, ইন্জিনিয়ারিং, বায়োলোজি, নেচরাল সাইন্স সব কিছুর মাঝে যোগসূত্র তৈরি করে। এজন্য সব এসব বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের রসায়ন তাত্ত্বিক বিষয়াদি ও ল্যাবরেটোরিতে কাজ করার প্রয়োজন হয়।
আমাদের দেশের শিক্ষকরা উন্নত দেশের এসব নিরাপত্তা বিষয়গুলো অবশ্যই জানেন, কিন্তু প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন রসায়ন বিভাগে এসব নিয়মে কোন কঠোরতা নেই। আশার কথা, ২০১৬ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক মনির উদ্দিন বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নেবার পর দেশে প্রথম বারের মতো রসায়ন বিভাগে আন্ডারগ্রেডে নতুন ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের ল্যাবকিটের সাথে সেফটি গোগল দেওয়ার নিয়ম করেছেন এবং ‘সেফটি অব হ্যাজার্ড ইন ক্যামিক্যাল ল্যাবরোটরি’ বিষয়ে একটি কোর্স চালু করেছেন।
রসায়ন বিষয়টি প্রাণের সাথে সম্পর্কিত। রসায়ন ল্যাবরেটোরিতে দুর্ঘটনায় পড়ে চোখ বা যে কোন অঙ্গের বড় ক্ষতি করে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু রসায়নবিদ হবার কোন অর্থ নাই।
লেখক: পিএইচডি শিক্ষার্থী, পার্ডু বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্ট লাফায়াতে, ইন্ডিয়ানা, যুক্তরাষ্ট্র।
এই লেখকের আরও পড়ুন
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা [email protected]। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |