নিউ ইয়র্কে গণহত্যা দিবস পালন

একাত্তরের পঁচিশে মার্চের গণহত্যা স্মরণে নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মতো ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করা হয়েছে।

প্রবাস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2017, 02:29 PM
Updated : 26 March 2017, 02:29 PM

স্থানীয় সময় শনিবার বেলা ৩টায় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে দিবসটি পালনের এ উদ্যোগ নেয় যৌথভাবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে ২৫ মার্চ কালোরাতের শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া ও একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এরপর ২৫ মার্চের গণহত্যার উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে আলোচনা অনুষ্ঠান হয়।

উদ্বোধনী ভাষণে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত, নিরপরাধ বাঙ্গালিদের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হিংস্র আক্রমণ ও নির্মম গণহত্যার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “পরিসংখ্যানের বিচারে বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার তালিকায় এই গণহত্যা একেবারে প্রথমদিকে অবস্থান করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের গণহত্যার যথাযথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। বরং দীর্ঘদিন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আমাদের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এটিকে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল।

"আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে সেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ উন্মোচিত হয়েছে।"

একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টার সাথে দেখা করে সরকারের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং এটি জাতিসংঘে উত্থাপনে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়টি অবহিত করেছি।

"এছাড়াও জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি।"

তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিকীকরণের অংশ হিসেবে এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সম্ভাব্য সবধরণের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।"

গণহত্যার বিষয়ে সমমনা বন্ধু রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ও গণহত্যা কবলিত দেশসমূহকে নিয়ে জাতিসংঘে ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্লাটফর্মে ২৫ মার্চের গণহত্যার পক্ষে একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি এক্ষেত্রে প্রবাসী বাঙালি, এনজিও, সুশীল সমাজ, মিডিয়া, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও গবেষকসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা অনেকেই এদেশের নাগরিক। আপনাদের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে এই গণহত্যার কথা তুলে ধরা।"

প্রবাসে গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সারা পৃথিবী ১৯৭১ এর প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আসুন দলমত নির্বিশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল সপক্ষ শক্তি ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির জন্য একযোগে কাজ করি।”

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য দেন মহসিন আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল মনসুর খান।

অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট প্রদীপ রঞ্জন কর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বসারত আলী, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাসুদুল হাসান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুখ আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভীন।