রোববার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত ভাষা শহীদ দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, "ভাষা আন্দোলনে আমরা উর্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম কিন্তু বাংলাদেশে এখন বিনাযুদ্ধে হিন্দি ভাষা আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে।
"ইংরেজী শব্দের সাথে বাংলা ভাষায় ঢুকছে হিন্দি শব্দও। বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, কিন্তু কোথাও এই ভাষার ব্যবহার নেই। এই ভাষার ব্যবহার আছে টেলিভিশনে ও সাংবাদপত্রে।"
সম্প্রতি ঢাকার একটি বিয়েতে উপস্থিত হয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার উদাহরণ টেনে গাফফার চৌধুরী বলেন, "সেই বিয়েতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে মুম্বাই শহরে আছি। একটি বাংলা গানও সেখানে শুনিনি।"
এটি একটি মনে রাখার মতো ঘটনা বলে উল্লেখ করে ভাষাসৈনিক গাফফার চৌধুরী বলেন, "যে বাংলাদেশ ২৪ বছর উর্দু ভাষার সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়েছে, তারা বিনা যুদ্ধে হিন্দি ভাষার কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, সম্পূর্ণ চলনে বলনে।"
আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, "একুশের একদিন আমরা সভাই বাঙালি হয়ে যাই। ঘষামাজা করে শহীদ মিনার পরিষ্কার করা হয়। এখন অনেক শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। কিন্তু অরিজিনাল ডিজাইনে হয় না।
"কিন্তু আসল শহীদ মিনারের পরিকল্পনায় একটি পাঠাগার মিউজিয়াম, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি ছিল। বর্তমান শহীদ মিনারকে একটি অর্ধ সমাপ্ত শহীদ মিনার বলা চলে।"
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছি প্রকৃত শহীদ মিনারের ডিজাইন উদ্ধার করা হোক। সে অনুযায়ী সেটাকে পুণর্নিমাণ করা হোক।"
আলোচনা সভায় তিনটি বিষয়ের উপর মূল আলোচনা করেন তিনজন সাংবাদিক।
এতে 'বিলেতে বাংলা পত্রপত্রিকার সঙ্কট ও সম্ভাবনা' নিয়ে লিখিত বক্তব্য দেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার।
'বাংলা ভাষার চর্চা ও বিকাশে বিলেতের টিভি চ্যানেলগুলোর ভূমিকা' নিয়ে চ্যানেল এস টেলিভিশনের প্রযোজক ও অনুষ্ঠান প্রধান ফারহান মাসুদ খান এবং 'অমর একুশে এবং বাংলা গণমাধ্যম' শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন প্রথম আলোর উপদেষ্টা সম্পাদক কামাল আহমদ।
ফারহান মাসুদ খান বলেন, "বিলেতে বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বাংলা সংবাদপত্রের সাথে সাথে বাংলা ভাষার প্রচারে ও নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাকে তুলে ধরতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।"
বিশেষ করে বাংলাদেশের সাথে নতুন প্রজন্মের যোগসূত্র স্থাপনে টেলিভিশনের জুড়ি নেই।"
তিনি এ প্রসঙ্গে চ্যানেল এস টেলিভিশনের বাংলা শেখার একটি অনুষ্ঠানের কথা ছাড়াও অন্যান্য বাংলাভাষী টেলিভিশনের বাংলা শেখার অনুষ্ঠানগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
'অমর একুশে এবং বাংলা গণমাধ্যম' শীর্ষক আলোচনায় কামাল আহমদ বলেন, "বিলেতের সবচেয়ে বড় রপ্তানি হলো তাদের ভাষা। এই ভাষায় কম্পিউটারের সকল কোড লেখা হয়ে থাকে। চীনা, আরবি, ফরাসি ইত্যাদি ভাষার কোডের ক্ষেত্রে ইংরেজির সহায়তা নেয়া হয়। বাংলা সফটওয়্যারের কোডও ইংরেজী নির্ভর।
কামাল আহমদ বলেন, "পত্রিকাগুলোকে অবশ্যই অনলাইন হতে হবে। টেলিভিশনগুলোও অনলাইন হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে মানুষ এখন সবসময় চলমান। মানুষের চলাচল বেড়ে গেছে। এর সাথে তাল মেলানোর জন্যই আজ সকল জিনিস মোবাইল ফরম্যাটে পাওয়া যাচ্ছে।
এসময় বিবিসিতে যখন অনলাইনে বাংলা বিভাগ চালুর সময়ে সেখানে কর্ম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন তিনি।
সাংবাদিক আব্দুস সাত্তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, "আজকাল মুদ্রিত সংবাদপত্রে মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি খোদ মুদ্রিত সংবাদপত্রেরই মৃত্যুবরণের সংবাদও জানতে হয়।"
"এটা বিলেতের বাংলা সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেই শুধু সত্য নয়, বিশ্বের দেশে দেশে নানা মূলধারার সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও সত্য।"
এক্ষেত্রে তিনি লন্ডনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার প্রচার সংখ্যা চার লাখ থেকে থেকে ছাপ্পান্ন হাজারে নেমে আসার উদাহরণ টেনে বলেন, "যার ফল হয়েছে এর প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ হয়ে যাওয়া।"
যুক্তরাজ্যে বাংলা পত্র-পত্রিকার বর্তমান হালের একটি চিত্র তুলে ধরেন আব্দুস সাত্তার।
বাংলা সংবাদপত্রের পাঠক সংখ্যা সীমিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এদেশে বাংলাভাষী চ্যানেলগুলো তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব সাধন করেছে।"
কীভাবে বাংলা সংবাদপত্রের পাঠক বাড়ানো যায় সে প্রসঙ্গে কিছু প্রস্তাবনাও দেন আব্দুস সাত্তার। সংবাদপত্রকে টিকে থাকতে হলে জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে বক্তব্যে জো দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাকি রেজওয়ানা, আনসার আহমদ উল্লাহ, সৈয়দ আনাস পাশা, হাসান হাফিজুর রহমান, মোস্তফা কামাল মিলন এবং আমিন বাবর চৌধুরী।
এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন, মিসবাহ জামাল, শহিদুল ইসলাম সাগর, আমিনুল ইসলাম তানিম, তৌহিদ শাকিল, শিহাবুজ্জামান কামালও ও সালাহ উদ্দিন শাহীন।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |