কানাডা জুড়ে মহান একুশে ‍উদযাপন

কানাডার কয়েকটি শহরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পালন করেছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

সদেরা সুজন, কানাডা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 09:29 AM
Updated : 22 Feb 2017, 09:33 AM

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিব উপলক্ষে ভিএজিবি’র উদ্যোগে স্থানীয় সময় রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় মন্ট্রিয়ালের এক মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের সভাপতি শাহ মোস্তাইন বিল্লাহ’র সভাপতিত্বে এ সভায় মূল প্রবন্ধ পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক রোকেয়া চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন ভিএজিবি সাধারণ সম্পাদক শোয়েব সাঈদ, লেখক-গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, সৈয়দ জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক আবুল আলম, অপরাহ্ন সুসমিতো, দিলীপ কর্মকার, আরিয়ান হক, হামোম প্রমোদ সিনহা, এ এফ এম মাহমুদুল হাসান, অ্যাডওয়ার্ড কর্নেলিয়াস গোমেজ, শরীফ ইকবাল চৌধুরী ও সৈয়দ সানজিদ হোসেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জিয়াউল হক জিয়া, গোলাম মুহিবুর রহমান, শামশাদ রানা, অশোক তেওয়ারী, মুফতি ফারুক, আবু হোসেন জয়, রওশন আরা শোয়েব, জিনাত ফারাহ নাজ, পুষ্পিতা দেব চম্পা, মো. আশরাফুল কবির, মাসুম আনাম, জাহাঙ্গীর আলম, নাহিদা আক্তার, মো. সিদ্দিক, মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন ও অর্ঘ ঘোষ।

সভার শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন পুষ্পিতা দেব, আরিয়ান হক, জিনাত ফারাহ নাজ, রওশন আরা শোয়েব, জাহাঙ্গীর আলম, মুফতি ফারুক, শামশাদ আরা রানা ও অপরাহ্ন সুসমিতো।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে টরন্টোর সাহিত্য সংগঠন ‘বেঙ্গলি লিটারারি রিসোর্স সেন্টার (বিএলআরসি)’-এর উদ্যোগে স্থানীয় সময় রোববার আয়োজন করা হয় ‘মাতৃভাষা উৎসব’।

টরন্টোর আলবার্ট ক্যাম্পবেল লাইব্রেরি মিলনায়তনে বহু ভাষাভাষী তরুণদের এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক-এর দুই সংসদ সদস্য ন্যাথানিয়েল এরকিন স্মিথ এবং আর্থার পটস।

বিএলআরসি সভাপতি রাখাল সরকার শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। তিনি প্রবাসের তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে প্রত্যেকের নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আহ্বান জানান।

মাতৃভাষা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ: স্টোরিজ অব দ্য ইয়ুথ’ পর্বে আলোচনায় অংশ নেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জসুয়া, বাংলাদেশি তরুণ হাসিব করিম, শর্মিলা সেনথিল মনোহরন, চাইনিজ বংশোদ্ভূত জুনিং (শ্যারন) শি, কানাডিয়ান-গায়ানিজ অমর অজয় ল্যাচমান।

মাতৃভাষা বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ভাষা-বিষয়ক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য মেথিউ কেলওয়ে, ‘বিচমেট্রো নিউজ’ পত্রিকার সম্পাদক আনা কিলেন, আকবর হোসেন, কবি সব্যসাচী নাগ ও কবি ভাকার রাইস।

এছাড়া সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল গান ও নাচ। নাচে অংশ নেন সূচনা দাস বাঁধন, শ্রেয়সী প্রামাণিক, রাধিকা ভট্টাচার্য, আরিত্রি ভট্টাচার্য, সুকন্যা চৌধুরী, সামারা ও নিশুতি সাহা।

পরিচালক নাদিম ইকবালের তথ্য-চলচ্চিত্র ‘মাদার টাং’-এর প্রদর্শনী ছিল অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা।

সব ভাষাভাষীদের সুবিধার্থে পুরো অনুষ্ঠানটি ইংরেজিতে উপস্থাপন করেন অর্ক ভট্টাচার্য, সূচনা দাস বাঁধন, অদিতি জহির, ব্রতী দাস দত্ত, জ্যোতি দত্ত পুরকায়স্থ, কৃত্যা চৌধুরী, সুবর্ণ চৌধুরী ও চিত্তা চৌধুরী।

একই দিনে কানাডার মন্ট্রিয়ল থেকে যাত্রা শুরু করা নতুন কানাডিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল ‘টিভি এশিয়া এইচডি’র আয়োজনে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা ও ভাষা শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ্ জানানো হয়।

শামসাদ রানা ও শর্মীলা ধরের সঞ্চালনায় এ সময় চ্যানেলটির সিইও ইকবাল কবীর উপস্থিতি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর মারভিন রটরান্ড।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন চ্যানেলের প্রধান বার্তা সম্পাদক তানভীর ইউসুফ রনী, মার্কেটিং ম্যানেজার খালিদ হোসেন শাহিন, সিনিয়র সাংবাদিক রুমু ইসলাম ও মাহবুব ভুঁইয়া।

অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শ্বাশত সন্যাল, সুমা চৌধুরী, দেবপ্রিয়া কর রুমা এবং সরগম মিউজিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা। দিব্য ধরের বেহালায় তোলা হয় একুশের গান।

কানাডার মন্ট্রিয়লে একুশের প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ‘সার্বজনীন একুশ উদযাপন কমিটি’।

স্থানীয় সময় সোমবার ও বাংলাদেশ সময়ে একুশের প্রথম প্রহরে পার্কের সালাতীন ব্যাঙ্কুয়েট হলে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনও অংশ নেয় এ আয়োজনে। এ সময় মন্ট্রিয়লের ডেপুটি মেয়র ও স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর ম্যাদাম মেরি ডেরস উপস্থিত ছিলেন।

‘তোমাদের আশা অগ্নিশিখার মতো জ্বলবে, প্রতিশোধ এবং বিজয়ের আনন্দে’- শিরোনামে ‘বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়াল’- এর সার্বজনীন মহান একুশ উদযাপন করেছে মন্ট্রিয়লের ৬৭৬৭ কোট দ্যা নেইজে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উপস্থিতিতে অস্থায়ী শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

‘মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’- শিরোনামে ‘সম্মিলিত অমর একুশে উদযাপন কমিটি’র উদ্যোগে মন্ট্রিয়লের সেন্টরক স্ট্রিটের সেন্টার উইলিয়াম হিংস্টন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার মধ্য দিয়ে মহান একুশের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

কবিতা আবৃত্তি করেন শামসাদ রানা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শর্মীলা ধর, কেয়া ভট্টাচার্য, মুনমুন দেব, শেলী দেব, মুধুমিতা দে ও পূরবী হালদার। 

শর্মীলা ধরের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ কানাডার শাখার অন্যতম নেতা শ্যামল দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক তাজুল মোহাম্মদ, অধ্যক্ষ ফনীন্দ্র ভূষণ ভট্টাচার্য, জিয়াউল হক জিয়া ও কবি আব্দুল হাসিব।

এছাড়া একুশের প্রথম প্রহরে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় কানাডা আওয়ামী লীগ, ক্যুইবেক আওয়ামী লীগ, মৌলভীবাজার সমাজ কল্যাণ সমিতি, উদীচী মন্ট্রিয়ল, তৈমুননেসা ফাউন্ডেশন কানাডাসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন।

টরন্টো প্রবাসী বাঙালিরা একুশের প্রথম প্রহরে ডেনফোর্থ ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এ সময় শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন টরন্টোর মেয়র জন টরি। 

ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই অ্যাসোসিয়েশন, প্রবাসী বৃহত্তর রংপুরবাসী, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, টরন্টো ফ্লিম ফোরাম, অন্য থিয়েটার, জগন্নাথ হল অ্যাসোসিয়েশন, হবিগঞ্জ সমিতিসহ আরও কয়েকটি সংগঠন।

অটোয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত, কালো পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে মহান একুশের কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!