মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়

কুনমিং বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষার্থী হিসাবে গবেষণার জন্য মাঝেমাঝে বিভিন্ন জায়গাতে যেতে হয়। গত বছর বিষাক্ত মাকড়সার বিষ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলাম চীনের ইউনান প্রদেশের ডালি নামের একটি শহরে।

এম এ হাকিম, চীনের কুনমিং থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 August 2015, 01:53 PM
Updated : 4 August 2015, 01:53 PM

কাজের সুবাদে এত সুন্দর একটা জায়গা দেখতে পাবো ভাবিনি। আমি ও আমার দুই গবেষণা সহকর্মী, সারারাতের ট্রেন ভ্রমন শেষে ভোরে পৌঁছালাম ডালি রেল স্টেশনে। স্টেশন থেকে বের হয়ে হোটেলে যাবার জন্য ট্যাক্সি নিলাম, কিছুক্ষনের মধ্যেই একটা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটা হোটেলের সামনে এসে ট্যাক্সি থামল, নেমে দাড়াতেই বিশাল পাহাড়ের উপরের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত হলাম, দুর থেকে ভেসে আসা সারি সারি মেঘ যেন পাহাড়ের সঙ্গে আলিঙ্গন করছে।

আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘগুলো যেন পাহাড়ের দীর্ঘসারি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, অদ্ভুত   সৌন্দর্য্য। রুমে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বের হলাম বাইরে।

এরপর কাছের আরেকটি পাহাড়ের জঙ্গলের ধারে মাকড়সার বিষ সংগ্রহ করার জন্য গেলাম, পাহাড়ের পাদদেশে রাস্তার দুইদিকে সারি সারি গাছ, আর সেই গাছে বাসা বেধে আছে অসংখ্য বিষাক্ত মাকড়সা। হাতলযুক্ত নেট দিয়ে মাকড়সা ধরছি আর আরেকটা বক্সে ভরছি, প্রায় ৫০০ মাকড়সা ধরার পর রাস্তার পাশ বসে ব্যাটারি চালিত যন্ত্রের সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে সেই মাকড়সা থেকে বিষ বের করে টিউবে সংগ্রহ করলাম।

সারাদিন এভাবে কাজ করার পর বিকেলে গেলাম সেখানকার একটি নদীর ধারে, নদীর নাম ‘আর হাই’। চারিদিকে পাহাড়, মাঝখানে নদী আর উপরে ভেসে যাওয়া মেঘের ভেলা। অবিশ্বাস্য প্রকৃতির এক খেলা।

যেকোন মানুষ এখানে এলে প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হবেই। অনেক পর্যটক বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে, কেউ নৌকায় চড়ে ঘুরছে, পানিতে অনেক পাখি ভেসে বেড়াচ্ছে ও ডুবসাতার দিচ্ছে!

সব কিছুই যেন জায়গাটাকে অনেক বেশি সুন্দর করে তোলার জন্য ব্যস্ত। আমরাও ভাড়াটে নৌকা নিয়ে নদীর মাঝে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরলাম। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায়, সেখানেই নদীর ধারে ছোট্ট একটা রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খেলাম, ফ্রাইড ফিশ ও রাইস।

পরের দিন সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি, তাই আর কাজে যাওয়া হলো না, বৃষ্টির মধ্যেই দুপুরে গেলাম ডালি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেতে, একদম পাহাড়ের উপরে ক্যাম্পাস, ক্যান্টিনে বসে নিচে তাকিয়ে দেখছি দিগন্তজুড়ে বৃষ্টি ঝরে পড়ার দৃশ্য, কিভাবে মেঘগুলো জল হয়ে ঝরে পড়ছে পৃথিবীর বুকে।এমন দৃশ্যগুলো যেন মনের বিশালতাকে বাড়িয়ে দেয়।

পরের দিন ঝকঝকে রোদ, আবার সেই জঙ্গলের ধারে গেলাম মাকড়সা থেকে বিষ সংগ্রহ করতে, কাজ শেষে ফেরার পথে গেলাম এক হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক চীনা পূরাকীর্তি দেখতে, এত বছরের পুরনো কিন্তু এখনো এতটুকু খসে বা ধসে পড়েনি।

বুঝলাম, চীনারা তাদের ঐতিহাসিক স্থানগুলো খুব যত্ন করে সংরক্ষণ করে। রাতের খাবার খেয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। পরদিন সকালে ফিরতি যাত্রা বাসে, ডালি শহর থেকে বাইরে আসতে আসতে যতক্ষন লাগলো, অপলক চোখে শুধু দূর পাহাড়ে সাদা মেঘ ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়ার দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, আর মনে মনে গাইছিলাম রবী ঠাকুরের সেই গান ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে’

বাসে করে ফিরে এলাম নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে, মাঝে মাঝে সেই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে আজও   মনে মনে ফিরে যাই সেই অপার সৌন্দর্য্যের ডালিতে।

প্রবাস জীবনের গল্প ও অভিজ্ঞতা এখন থেকে আমাদের সরাসরি জানাতে পারেন। পুরো নাম ও সংশ্লিষ্ট ছবিসহ লেখা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়  probash@bdnews24.com