কারওয়ান বাজারে খালেদার গাড়িবহরে হামলা

সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমে বাধা পাওয়ার একদিন বাদে হামলার মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2015, 12:15 PM
Updated : 20 April 2015, 05:46 PM

সোমবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলার পাশাপাশি ব্যাপক ইট ছোড়া হয় তার গাড়িবহরে। এতে বহরের প্রায় সব গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খালেদা জিয়া অক্ষত থাকলেও তার গাড়ির কাচ ফেটেছে। আহত হয়েছেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীরাসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

সরকারের উসকানিতে এই হামলা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে বুধবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে সারা দেশে হরতাল ডেকেছে বিএনপি।

হামলাকারী কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনাটিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন।

আগের দুই দিনের মতো সোমবার বিকালেও নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন খালেদা। তবে এদিন পুলিশ ছিল না তার সঙ্গে। সকালে তার নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়, যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।

গাড়িবহর নিয়ে কারওয়ান বাজারে গিয়ে কাঁচা বাজারের সামনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে পথসভার সময় হামলার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।

বিকাল পৌনে ৬টার দিকে তিনি গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি লাগোয়া কাঠের একটি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য শুরু করেন।

খালেদা বলেন, “আমি আজ এখানে এসেছি, তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চাইতে। সে আপনাদের লোক। তাকে বাস মার্কায় ভোট দেবেন। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে তাবিথকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।”

আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই চোরদের আর ভোট দেবেন না। সরকার যতই কৌশল করুন, ২৮ এপ্রিল ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে জনগণ রায় দেবে।”

৬টার দিকে তার বক্তব্য যখন শেষ প্রায়, তখন সমবায় ভবনের কাছ থেকে এক দল ব্যক্তি ‘ছি ছি খালেদা- খালেদা ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে।

এর মধ্যে শুরু হয় আশপাশের ভবনের ওপর থেকে খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট নিক্ষেপ। তার ব্যক্তিগত  নিরাপত্তা রক্ষীদের কয়েকজনের মুখ ও মাথায় ইট এসে পড়ে। আহত হন সেখানে থাকা কয়েকজন সাংবাদিকও।

এই অবস্থায় খালেদা জিয়া গাড়িতে ঢুকে যান, ওই গাড়িতে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানও। ইটের আঘাতে ওই গাড়ির এক পাশের কাচ ফেটে যায়।

বহরের সব গাড়ি ঘুরে এফডিসির দিকে এগোতে গেলে এক দল লোক তখন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। খালেদার গাড়ি তার নিরাপত্তা রক্ষীরা ঘিরে সামনের দিকে নিয়ে যায়। তবে অন্য প্রায় সব কটি গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়।

এসময় খালেদার একান্ত  ব্যক্তিগত সচিব এবিএম সাত্তার, গাড়িচালক শেখ শাহেদুল শাহেদসহ ‘চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ)’ কয়েকজন সদস্যের মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।

সিএসএফের আহত সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ওমর ফারুক ও ফারুক হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার ফজলুর রহমান ও খালেদার কার্যালয়ের কর্মী এনামুল ইসলাম।

খালেদার গাড়িবহর ঘিরে বিএনপির যে সব নেতা-কর্মী ছিলেন, তারাও মারধরের শিকার হন।

হামলার পর খালেদার বহরের আটটি গাড়ি এফডিসির দিকে গেলে কিছু দূর তেড়ে যায় হামলাকারীরা। খালেদার গাড়িবহর এফডিসির ফটকের সামনে কয়েক মিনিটের জন্য থেকে মগবাজারের দিকে রওনা হয়।

খালেদা জিয়ার গাড়ি লক্ষ করে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে রাতে দাবি করেন তার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর।

সরকারবিরোধী আন্দোলন শিথিল করে সিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়া নামার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনগণের প্রতি আহ্বান রেখেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যেখানেই যাবেন, সেখানেই যেন তাকে নাশকতার জন্য প্রশ্ন করা হয়।

রোববার খালেদা রাজধানীর উত্তরায় গণসংযোগে গেলে তাকে কালো পতাকা দেখানো হয়। সেখানে লাঠি হাতে হামলার চেষ্টা হলেও তা ঠেকায় পুলিশ।

উত্তরায় বাধার পর খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “কোনো বাধায় কাজ হবে না। গণজোয়ারে সব বাধা উড়ে যাবে।”

কারওয়ান বাজারে হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অবরোধ-হরতালের জন্য ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ছিল।

“তারা (কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী) বিএনপি চেয়ারপারসনকে কালো পতাকা দেখানোর কর্মসূচি নিয়েছিল। এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটে।”

তবে ওই এলাকায় কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের সেখানে তৎপর দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারে হামলার পর শাহজাহানপুরে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে জনসংযোগ করেন খালেদা।

গাড়িবহর নিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল সড়ক, শান্তিনগর মোড়, মালিবাগ মোড়, রাজারবাগ সড়ক, শাহজাহানপুর সড়ক, খিলগাঁও রেল ক্রসিং, রামপুরা মেরুল, বাড্ডা সড়ক দিয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত যান।

এসময় হ্যান্ড মাইক থেকে মির্জা আব্বাসের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়, বিলি করা হয় প্রচারপত্র।

নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি গাড়ি ঘিরে চলতে থাকা নেতা-কর্মীদের মুখে ‘খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা কেন, খুনি হাসিনা জবাব চাই’ স্লোগানও ওঠে।

দিনের প্রচার শেষ করে ইউনাইটেড হাসপাতাল হয়ে বাসায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। হামলায় আহতরা ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

লিখিত অভিযোগ লাগবে ইসির

উত্তরায় রোববার খালেদা জিয়াকে প্রচারে বাধা দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

রোববার উত্তরায় বাধার চিত্র

তাবিথ সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে প্রচারের সময় সাংবাদিকদের বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, আপনারা দেখেছেন গতকাল আমাদের দেশনেত্রী, ২০ দলীয় নেত্রীর গাড়িবহরকে বাধা দেওয়া হয়েছিল এবং অশ্লীল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এটা কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাম্য নয়।”

তার অভিযোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,  অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“আমাদেরকাছে যদি ওরকম অভিযোগ আসে, অবশ্যই আমরা দেখব। অভিযোগ আসতে হবে লিখিতভাবে। সেখানে আমার প্রমাণ লাগবে, প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব।”

নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী প্রতিপক্ষের পথসভা, ঘরোয়া সভা বা অন্যান্য প্রচারাভিযান পণ্ড বা এতে বাধা দিতে পারবেন না।

বিধি লঙ্ঘনের দায়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। বিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির কাছে।