মান্না আটক

অডিও ক্লিপ ফাঁসের পর তুমুল আলোচনায় থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘গোয়েন্দা পুলিশ’ পরিচয়ে ধরে নেওয়ার ২০ ঘণ্টায়ও তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।

লিটন হায়দারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2015, 05:12 PM
Updated : 24 Feb 2015, 05:12 PM

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ককে আটকের কথা স্বীকার না করলেও মঙ্গলবার দিনভর তাদের তৎপরতায় ইঙ্গিত মিলেছে, সরকারি কোনো বাহিনীর হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

এর মধ্যে মান্নার সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। জিডি করেছেন তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানা।

বনানী থানায় জিডি করার পর থানার ওসি ভূইয়া মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারা মান্নার সন্ধানে ‘সর্বাত্মক’ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

মান্নার কোনো খোঁজ জেনেছেন কি না- জানতে চাইলে রাতে বেগম সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না, আমরা কোনো খোঁজ পাইনি।”

রাতে বনানী থানায় যান মান্নার স্ত্রী মেহের নেগার ও মেয়ে নীলম মান্না। তবে থানার ওসির দেখা না পেয়ে ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে টেলিফোনে ওসির সঙ্গে কথা বলেন মেহের নেগার।

১১টার দিকে থানা থেকে বেরিয়ে আসার পর মান্নার স্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “না, কোনো খোঁজ আমরা পাইনি। তিনি (ওসি) বলেছেন, তারাও অন্ধকারে রয়েছেন।”

মান্নাকে আটক করার বিষয়ে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।  

মান্নাকে আটকের এই ঘটনাটি অস্পষ্ট মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাদা পোশাকে ধরে নিয়ে এভাবে তো সত্য গোপন করা চলতে পারে না।”

“যদি কিছু হয়ে থাকে নিখোঁজ নাগরিকের, সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের,” বলেন তিনি।

মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশজুড়ে।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার ভোররাতে মান্নাকে বনানীতে তার ভাইয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এক দল ব্যক্তি তুলে নেয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

মান্নাকে আটকের এই ঘটনায় সরকারি সংস্থাই জড়িত দাবি করে বিএনপির প্যাডে পাঠানো দলটির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের এক বিবৃতিতে এর নিন্দা জানানো হয়।

মান্নাকে আটকের অভিযোগ তার পরিবার করার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি। তবে অন্য কোনো সংস্থা তাকে আটক করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

স্বীকার না করলেও দিনভর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে তৎপরতা ছিল, তাতে মান্না যে বাহিনীগুলোর কারও কাছে রয়েছে, তা বাহিনীগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে বনানী থানার কর্মকর্তাদের দিনভর ব্যস্ত দেখা গেছে। রাতেও সেখানকার কর্মকর্তাদের মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াসহ নানা বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।

মামলা কোথায় হবে, অভিযোগ কি হবে তা নিয়ে গুলশান বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে বেশ তৎপর দেখা যায়। এছাড়া গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকজনকেও গুলশান বিভাগের কয়েকটি থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গেছে।

এদিকে সন্ধ্যার দিকে বনানী থানায় মান্নাকে হস্তান্তর করা হচ্ছে এমন খবরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। মান্নাকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে হস্তান্তর করা হবে এমন খবরও ছিল। 

এ ব্যাপারে র‌্যাবের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মান্নার নিখোঁজ হওয়া বিষয়টি তারাও তদন্ত করে দেখছেন। কোনো খবর হলে জানতে পারবেন।

পুলিশ আটকের খবর অস্বীকার করার পর মান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুরে বনানী থানায় জিডি করা হয়।

বেগম সুলতানার করা ওই জিডিতে বলা হয়, সোমবার রাতে নিজের কলাবাগানের বাসা থেকে মান্না বনানীর ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে ৬-৭ জন লোক গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসা থেকেই মান্নাকে নিয়ে যায়।

“রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকের ৬/৭ জন বাসার গেটে এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেয় এবং এখানেই মান্না আছে বলে জানায়। এসময় বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকার করে। পরে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে দরজা খুলে দেওয়া হয়।”

এরপরই ওই ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বলে বেগম সুলতানা জানান।

কিন্তু পরে পুলিশের অস্বীকারের খবর গণমাধ্যমে দেখে মান্নার সন্ধানে পুলিশের শরণ নেওয়ার কথা জিডিতে উল্লেখ করেন তিনি।

জিডির পর বনানী থানার ওসি মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “মান্নার অবস্থান জানতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”

সালাহ উদ্দিনের বিবৃতিতে অবিলম্বে মান্নাকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মান্না বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছিলেন।

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানরত বিএনপি নেতা খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও টেপে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাকে কথা বলতে শোনা যায়।

এর মধ্যে খোকার সঙ্গে আলাপে এক সময়কার ডাকসুর ভিপি মান্নাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথায় সেনা হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্যোগী হতে তার আগ্রহের প্রকাশ ঘটে।

খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মান্নার কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পুলিশ।

শাহবাগার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে থানার ওসি বা কোনো এসআই বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য নোট করা হলো উল্লেখ করে একটি জিডি করে থাকেন।

“তেমনি আজকে (সোমবার) মান্না, খোকা ও অজ্ঞাত ব্যক্তির কথোপকথনের খবরটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ওসি সিরাজুল ইসলাম থানায় জিডি করে রেখেছেন।”

</div>  </p>