মান্নার সন্ধান চেয়ে জিডি

মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে তার পরিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2015, 09:04 AM
Updated : 25 Feb 2015, 02:29 AM

মান্নার বড় ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানা মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে বনানী থানায় জিডি করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন থানার ওসি ভূইয়া মাহবুব হাসান।

সুলতানা জিডিতে দাবি করেছেন, সোমবার রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে ৬-৭ জন লোক গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বনানীর বাসা থেকেই মান্নাকে নিয়ে যায়।

তিনি মান্নার সন্ধান চাওয়ার পাশাপাশি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন।

মান্নার মেয়ে নীলম মান্না বলেন, “আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।”

এদিকে মান্নাকে আটকের খবর নাকচ করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নার দুটি ফোনালাপ ফাঁসের পর দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যেই মান্নাকে ধরে নেওয়ার অভিযোগ এল।

বেগম সুলতানার করা জিডিতে বলা হয়েছে, রাতে নিজের কলাবাগানের বাসা থেকে মান্না বনানীর ওই বাড়িতে যান।

“রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকের ৬/৭জন বাসার গেটে এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশের পরিচয় দেয় এবং এখানেই মান্না আছে বলে জানায়। এসময় বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকার করে। পরে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে দরজা খুলে দেওয়া হয়।”

এরপরই ওই ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বলে বেগম সুলতানা জানান।

জিডিতে বলা হয়, “এর আধা ঘণ্টা পর টিভির স্ক্রলে মান্নাকে ডিবি পুলিশ নিয়ে গেছে বলে দেখানো হলে তারা আশ্বস্ত হন। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে টিভি স্ক্রলেই ডিবি গ্রেপ্তারের কথা অস্বীকার করেছে লেখা দেখে তারা শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ কারণেই তারা এখন পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি। তবে অন্য কোনো সংস্থা তাকে আটক করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ওসি জানান, মান্নার অবস্থান জানতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার টেলিফোনে কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে বাংলাদেশজুড়ে তুমুল আলোচনা চলছে।  

কথোপকথনের দুটি অডিও ক্লিপ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসে।

এসব ক্লিপে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিএনপি জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে।

এর ভিত্তিতে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাকে গ্রেপ্তারের দাবিও উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের মুখ থেকে।

এদিকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পুলিশ।

শাহবাগার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে থানার ওসি বা কোনো এসআই বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য নোট করা হলো উল্লেখ করে একটি জিডি করে থাকেন।

“তেমনি আজকে (সোমবার) মান্না, খোকা ও অজ্ঞাত ব্যক্তির কথোপকথনের খবরটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ওসি সিরাজুল ইসলাম থানায় জিডি করে রেখেছেন।”

পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, সোমবারের খবরের ভিত্তিতে মান্না, খোকা ও অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে থানায় জিডি করা হয়েছে।

রমনা থানায় এই কথোপকথনকে ভিত্তি করে দুটি জিডি হয়েছে বলে ওই থানার পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান।