ভোটে হারা মান্নার বিকল্প সন্ধান

ডাকসু-চাকসু নির্বাচনে জয়ের মুকুট পরলেও জাতীয় নির্বাচনে এসে একবারও জিততে পারেননি মাহমুদুর রহমান মান্না, চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপ চেয়ে যার টেলিকথোপকথন ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2015, 12:15 PM
Updated : 24 Feb 2015, 04:12 PM

ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে দলটিতে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন।

রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, যা মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে পরিচিত, তাতে মান্নার সক্রিয় ভূমিকার কথা বেশ আলোচিত। এজন্য তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বিএনপি জোটের বর্তমান অবরোধ-হরতালের মধ্যে পরিস্থিতি যখন অস্থিতিশীল, তখনই আবার আলোচনায় মান্না; যিনি এখন নাগরিক ঐক্য নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা মান্নার সঙ্গে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার একটি এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনের আরেকটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, চলমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে তাকে আগ্রহ প্রকাশ করতে।

চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসা মান্নাসহ নাগরিক সমাজের একাংশের উদ্যোগের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, অসাংবিধানিকভাবে কাউকে ক্ষমতায় আনতে চেষ্টা চলছে।

বগুড়ায় জন্ম নেওয়া মান্না ১৯৬৪ সালে ঢাকায় আসেন। ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন আরমানিটোলা স্কুল থেকে। ঢাকা কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ১৯৬৮ সালে।

ছাত্রলীগে সম্পৃক্ত ছিলেন মান্না, স্বাধীনতার পর জাসদ গঠিত হলে রোমাঞ্চের নেশায় অনেক তরুণের সঙ্গে তিনিও ভেড়েন এই দলটিতে, ১৯৭৩ সালে ২২ বছর বয়সে চলে আসেন জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ১৯৭২ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে চাকসুর জিএস নির্বাচিত হন মান্না। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন।

এরপরই জাসদ ভেঙে খালেকুজ্জামান ও আ ফ ম মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে বাসদ গঠিত হলে মান্না থাকেন তাদের সঙ্গে। বাসদ ছাত্রলীগ থেকে ১৯৮০ সালে নির্বাচন করে দ্বিতীয় দফায় ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। দুবারই তার সঙ্গে জিএস ছিলেন বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা আকতারুজ্জামান।

১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন তিনি। এরপর এক সময়ের জাসদ নেতা মীর্জা সুলতান রাজার নেতৃত্বে জনতা মুক্তি পার্টি গঠিত হলে ওই দলের নেতা হন মান্না। এই দলটি ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগে বিলুপ্ত হলে মান্না হয়ে যান আওয়ামী লীগের নেতা।

নিজের এলাকা বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে একাধিকবার নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হলেও জিততে পারেননি মান্না। ২০০১ সালে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রার্থী হয়ে ৪৭ হাজার ভোট পেয়েছিলেন তিনি। সেবার বিএনপির প্রার্থী রেজাউল বারী ডিনা ১ লাখ ১৬ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন।

ভোটে হারলেও কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে আসেন মান্না। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির সময়ও দলের ওই পদেই ছিলেন তিনি।

তবে ওই সময়ে বাংলাদেশ সেনা নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় দলে সংস্কারের দাবি তুলে ফের আলোচনায় আসেন মান্না। তার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও তখন সংস্কারপন্থি বলে চিহ্নিত হন।

পরে ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে রাজ্জাক, আমু, তোফায়েল, সুরঞ্জিত কাউকেই মন্ত্রিসভায় নেননি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলেও নীতি-নির্ধারণী পদ হারান তারা।

২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়ে কার্যত আওয়ামী লীগে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েন মান্না; আমু-তোফায়েলরা পরে মন্ত্রিসভায় ফিরলেও দলে ফেরা আর হয়নি মান্নাসহ কয়েকজনের।

দলবিযুক্ত মান্না তখন থেকে বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শো-তে সক্রিয় হয়ে নিজেকে রাজনীতিতে অস্থিত্বশীল রাখেন। এই সময়ে নাগরিক সমাজের হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় তাকে, ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গেও।

এর মধ্যে ২০১২ সালে নাগরিক ঐক্য নামে একটি সংগঠনের ঘোষণা দেন ৬২ বছর বয়সী মান্না। নাগরিক সংগঠন হিসেবে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করলেও এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠছে। 

নাগরিক ঐক্যের ঘোষণায় বলা হয়েছে, বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলায় পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে নাগরিক ঐক্য।