নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না ‘আটক’

টেলিফোন কথোপকথনে সরকার উৎখাতে সামরিক হস্তক্ষেপে আগ্রহ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চাওয়ার কথা প্রকাশের পর তীব্র সমালোচনার মুখে থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2015, 01:53 AM
Updated : 24 Feb 2015, 05:46 AM

তবে মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

মান্নার মেয়ে নিলম মান্না বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,  সাদা-পোশাকের কয়েকজন লোক মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে বনানীতে তাদের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই বলে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূর আলম জানিয়েছেন।

আর মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি। অন্য কোনো সংস্থা তাকে আটক করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মান্না নাগরিক ঐক্য নামের একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে মান্নার টেলিফোনে কথা বলার দুটি অডিও ক্লিপ রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসে।

এতে মান্নাকে চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পাশাপাশি বিএনপি জোটের আন্দোলন জোরদারে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথাও বলতে শোনা যায় তাকে।

ওই অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সোমবার আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহল থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

সরকার উৎখাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুই-তিনটা লাশ ফেলে দেওয়ার’ কথা বলায় ষড়যন্ত্রের দায়ে  মান্নাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মান্নাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাকে দেখা মাত্রই ‘গণধোলাইয়ের’ ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক নেতা মান্না ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বাদ পড়ার পর বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান ও টেলিভিশন টক শো-তে সরব ছিলেন।

নাগরিক সমাজের হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিনিধিত্বকারী মান্নার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে।

গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াত জোট অবরোধ ডাকার পর সহিংসতায় প্রাণহানির মধ্যে কামাল, মান্নার উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়।

সংলাপ না হলে আবারো ওয়ান ইলেভেন হওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কথা উঠলে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মান্না। ২০১২ সালে আত্মপ্রকাশ করা নাগরিক ঐক্য প্রথমে নাগরিক সংগঠন হিসেবে কাজ শুরু করলেও এটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠছে। 

ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে ফেরা মান্না ২০০৭ সালে রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপের পর সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।

সে সময় দুই নেত্রীকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা, যা মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে পরিচিত, তাতে মান্নার সক্রিয় ভূমিকার কথা বেশ আলোচিত। এজন্য তাকে ওয়ান-ইলেভেনের ‘কুশীলব’ বলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।