উত্তর পাড়ায় তাকিয়ে লাভ নেই: খালেদাকে হাসিনা

অবরোধ-হরতাল চালিয়ে অসাংবিধানিক কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় আনা এখন আর যাবে না বলে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2015, 01:40 PM
Updated : 22 Feb 2015, 02:43 PM

তিনি বলেছেন, “উনি(খালেদা জিয়া) উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। মনে করছেন, ওখান থেকে কেউ এসে ওনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

“সংবিধান সংশোধন করে ক্যাপিটাল পানিশমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের আশায় বসে আছেন, তারাও জানে এভাবে ক্ষমতায় এলে তার পরিণতি কী হয়। জিয়া, এরশাদ, মইনুদ্দীন আর ফখরুদ্দীনের পরিণতি সবাই দেখেছে। ওই আগুনে কেউ পা দিতে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি না।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল দেড় মাস ধরে অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে রোববার রাজধানীতে এক সভায় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপি সেনাবাহিনী তথা অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতেই এই আন্দোলন চালাচ্ছে।

হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় এই পর্যন্ত ১০০ মানুষ নিহত হলেও জরুরি অবস্থা জারির সম্ভাবনা নাকচ করে শেখ হাসিনা আগেই বলেছেন, নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।

চলমান পরিস্থিতিতে সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা কেউ কেউ করলেও তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রয়েছে।

বাংলাদেশের ৪৪ বছরের ইতিহাসে বেশ কয়েকবারই ঢাকার এক সময়ের উত্তর প্রান্তে থাকা সেনানিবাস থেকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ হয়েছে, এই কারণে তা উত্তর পাড়া হিসেবে রাজনৈতিক মহলে আলোচিত।

ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বাংলাদেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনা হস্তক্ষেপের ইতিহাস এবং সে পথ বন্ধ করতে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের কথা উল্লেখ করেন।

সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে মারা যান। একইভাবে ক্ষমতা দখলকারী হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন। দুর্নীতির মামলায় বেশ কয়েক বছর জেলও খাটতে হয়েছে তাকে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বশেষ সেনা হস্তক্ষেপের ঘটনাট ২০০৭ সালের, তখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ এখন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। ওই সময়কার নিয়ন্ত্রণকর্তা তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদও রয়েছেন একই দেশে।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জনগণের সাড়া না পেয়ে বিদেশিদের দিকেও তাকিয়ে আছেন।

“বিজেপি নেতার কথা বলে ধোঁকাবাজি করেছে। দেশ ছেড়ে পরদেশের দিকে তাকিয়ে আছে।”

রাজনীতির বর্তমান অস্থিরতার অবসানে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে নাগরিক সমাজের যারা সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছেন, তাদেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ওনারাও বসে আছেন, কিছু একটা টুপ করে পড়বে, আর পতাকা-টতাকা পাবেন।”

চলমান পরিস্থিতির অবসানে উদ্যোগী হয়ে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকদের’ পক্ষ থেকে ১৩ জনের কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ ধরে কারও নাম উল্লেখ না করে তাদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

“আমরা ক্ষমতায় থাকতে কত তদবির.. কেবিনেট সেক্রেটারি হবে। তারপর, করেও দিলাম। এখন চাকরি যাওয়ার পর সুশীল হয়ে গেছেন। আমাদের সবক দিচ্ছেন।”

“একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। গার্মেন্টস নিয়ে কত কথা বলেন। এখন, ১৩ জনের সদস্য হয়ে গেছেন।”

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক’দের এই কমিটিতে সাবেক উপদেষ্টা এস এম শাহজাহান, জামিলুর রেজা চৌধুরী, আকবর আলি খান, রাশেদা কে চৌধুরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সিএম শফি সামি, আইনজীবী শাহদীন মালিক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের নাম ঘোষণা করা হয়।

তবে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি পারভেজ এই কমিটিতে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শুরু করেছিল, এবার শুরু করেছে খালেদা বাহিনী। উনি (খালেদা জিয়া) ভেবেছেন, ২/১টি বোমা মারলে সরকার পড়ে যাবে..।

“৪৮ দিন ধরে বিএনপি নেত্রী জামাতসহ কয়েকজন মিলে অবরোধের ডাক দিয়েছে। আবরোধের সাথে সাথে আবার হরতাল। তাদের কর্মসূচিতে কোনো জনসম্পৃক্ততা নেই। একটাই কাজ, বোমা মেরে মানুষ হত্যা, পুড়িয়ে হত্যা। একাত্তরের মতো গণহত্যা শুরু করেছে।”

কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থানের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “বাড়ি ছেড়ে অফিসে আমার আয়েশে বসে আছে। বাড়ি ছাড়ার অভ্যাস তার নতুন নয়। বহুবার বাড়ি ছেড়েছেন।

“৮৫ সালে একবার ঘর ছেড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলেন। এরশাদ সাহেব তার ভাবি সাহেবকে হোটেল পূর্বাণী থেকে টেনে বের করলেন। উনার সাথে আর কী টেনে বের করেছিলেন, তা আমার বলার দরকার নাই। তখনকার পত্রিকা দেখলে জানতে পারবেন।”

“৮৬ সালে আরেকবার সেপাহী জনতার ডাক দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন। সেপাহী বের হল না। জনতাও আসল না, ওনাকে ক্ষমতায়ও বসাল না।”

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএনপির হরতালের কর্মসূচি ঘোষণার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি আন্দোলনের নামে অফিসে বসে আছে। আর, ওনার কিছু লোক কোথায় লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে থেকে স্টেটমেন্ট দিয়ে হরতালের ডাক দিচ্ছে।”

চলমান এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে হরতালের সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন, “এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে উনি অবরোধের পাশাপাশি হরতাল ডেকে যাচ্ছেন, যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পারে। নিজের নাতিদের বিদেশে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু, পরের ছেলেমেয়ের কী হবে সে চিন্তা উনি করলেন না। উনি নিজেরটা ছাড়া কারো কথা চিন্তা করেন না।”

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে খাবার নিতে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যত্রতত্র থেকে খাবার যাবে, আর কিছু হলে তো আমাদের দোষ হবে।

“উনার বিয়াই বাড়ি থেকে খাবার যায়, ভাইয়ের বাসা থেকে খাবার যায়। উনার তো খাবার অভাব হয় না।”

শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।