কামাল-মান্নাদের খায়েশ পূরণ হবে না: শেখ হাসিনা

কথিত সংলাপের উদ্যোগ নিয়ে রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক সমাজের তৎপরতার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2015, 01:25 PM
Updated : 11 Feb 2015, 02:00 PM

চলমান সহিংসতা বন্ধে নাগরিক সমাজের একাংশের প্রতিনিধিদের উদ্যোগের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি।

বুধবার জাতীয় সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কামাল হোসেন-মাহমুদুর রহমান মান্নাদের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের খায়েশ পূরণ হবে না।

বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশনে রাতের আলোচনা অনুষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার যদি কোনো অপরাধ করে সমালোচনা করুক। কিন্তু এ ধরনের মানুষ হত্যা করা বা এ ধরনের ঘটনার উস্কানি দেওয়া- তাহলে তারাও সমানভাবে অপরাধী হয়ে যাবে। খুনের দায় দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে।”

তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ড কখনো গ্রহণযোগ্য না। এ ধরনের জঘন্য ঘটনা পৃথিবীর কেউ কখনো দেখে নি, দেশের জনগণ তা সহ্য করবে না।”

আলোচনায় ‘উস্কানিদাতাদের’ সতর্ক করে তিনি বলেন, “কাজেই যারা এ ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলবে এগুলো দেখা হবে, মনিটর করা হবে। এদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উস্কানিদাতাদের অবশ্যই খবর নেব।”

স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী সেলিমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে হিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দগ্ধ ও আহতদের সহায়তা করার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

“আজকে মানুষের জীবন নিয়ে খেলে, লাশ ফেলে, মানুষকে পুড়িয়ে কিছু লোক এখান থেকে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। যারা জীবনে দল করতে পারে না, নির্বাচনে করতে পারে না; কিন্তু তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ। আর তাদের খায়েশ মেটাতে গিয়ে শত শত মানুষ পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে তাদের দৃষ্টি নেই।”

কামাল হোসেন-মান্নাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সবচেয়ে দুঃখ লাগে- যেদিন দেখলাম খালেদা জিয়ার পুত্র মারা যাওয়ার পর শোক জানাতে গেলেন ড. কামাল হোসেন, মান্না গং। তারা সব সময় হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলে, ভেবেছিলাম তারা অন্তত খালেদা জিয়াকে এসএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে অনুরোধ করবে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা হোক, বিএনপি নেত্রীও সুযোগ নেবে কীভাবে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা যায়।

“আমি কিন্তু সে আশায় ছিলাম- এটাই করবে। মতিয়া আপা (মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী) আমার সঙ্গে ছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম- নিশ্চয়ই মান্না-কামাল সাহেবরা অনুরোধ করবে, খালেদা জিয়া মেনে নেবে। আমরা খুব অবাক হয়ে গেলাম- এনাদের মুখ দিয়ে একটিবারের জন্য হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার কথা বের হল না। তারা একবারও বলল না।”

‘সুশীল’ সেজে রাজনীতিকরা টিভি টকশোতে গিয়ে আলোচনা করেন-এ কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “দুর্ভাগ্য এ দেশের- ইনারা এতো বড় বড় নেতা, তারা একদিকে রাজনীতিক দলও করেন, একাধারে আবার সুশীলও হয়ে যান, টিভি টকশোও করেন।”

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন- “যারা টকশো করে তারা ক’জন মানুষের খবর নিয়েছেন, ক’জনকে সাহায্য করেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের খবর নিয়েছেন?”

৯৬ শাসনামলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার সরকারের আমলে দেশে বেসরকারি টিভি চালু করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে সেখানে বসে [টিভি টকশোতে] মানুষকে উস্কানি দেয় তারা। তাদের আমি বলবো- অন্তত খালেদা জিয়াকে মানুষ মারা বন্ধ করার আবেদনটা করবে। তিনি মানুষ পোড়ানো বন্ধ করেন, অবরোধ-হরতালের নামে খুন-খারাবিটা যেন বন্ধ করে।”

নাগরিক সমাজের একাংশের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তাদের একটা কথা কি? আর কটা দিন যাক একটা ঘটনা ঘটবে। কি ঘটনাটা ঘটবে? কেউ তাদের চেয়ারে রেখে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে? একটার পর একটা মানুষের লাশ ফেলে যাচ্ছে। এ আশায় বসে আছে। নিজের ক্ষমতার লোভে মানুষ হত্যা-এটা কোন্ ধরনের রাজনীতি?”

বিভিন্ন বক্তব্য দিলেও এখনো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না দাঁড়ানোয় কামাল-মান্নার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কামাল হোসেন-মান্নাসহ যারা এত কথা বলছেন তারা ক’জন বার্ন ইউনিটে গেছেন, রোগীদের খবর নিয়েছেন? বার্ন ইউনিটে না গেলেও হাসপাতালেও তো যান নি। রোগীদের আর্থিক সাহায্যও করেন নি তারা।

 “ওনারা বসে আছে কখন খালেদা জিয়া মানুষ হত্যা করবে, এমন একটা ঘটনা করবে, লাশের পথ বেয়ে ক্ষমতা দখল করতে পারবে ওনারা। এ ধরনের চিন্তা নিয়ে ওনারা আছেন। ওনাদের সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে না। তাদের এ আশা নিরাশাই হবে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতহাসেই রয়েছে- যারা ফল পাড়বে তারাই ফল খাবে। লাশ ফেলবে খালেদা জিয়া, লাশের পথ বেয়ে তারা ক্ষমতায় যাবে বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না তা।”