ছাত্রলীগের হুমকির পরও শনিবার গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের জনসভা হবে এবং তাতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 26 Dec 2014, 11:43 AM
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কাল জনসভা হবেই। অবশ্যই আমরা কাল গাজীপুর যাবে। এখন বিরোধী দলের জনসভা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই।’’
নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগে জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি।
এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার মা খালেদা জিয়ার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বদরে আলম কলেজ মাঠে একই দিন সমাবেশের কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাতে কলেজ মাঠে এলাকায় বিএনপির লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেজন্য ছাত্র ও যুবলীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এরইমধ্যে সেখানে ছাত্রলীগ কর্মীরা মিছিল চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও বিএনপির কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “গাজীপুরে জনসভার অনুমতির সব প্রক্রিয়া আমরা পালন করেছি। স্থানীয় প্রশাসনকে তা জানানো হয়েছে। সেখানকার ডিসি-এসপিও আমাদের বলেছেন কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু দুই-তিন দিন আগে ছাত্রলীগ জনসভা করতে দেবে না বলে ঘোষণা দেয়। পুলিশের প্রত্যক্ষ মদদে তারা মঞ্চ দখল করে নিয়েছে। এটা নৈরাজ্য।’’
সরকার গণতন্ত্রের সব পথ ‘রুদ্ধ করে দিচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল, জনসভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার যদি ‘এভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়’, তার পরিণতি হবে ‘ভয়াবহ’।
“এখনো বলছি, আমরা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করছি। আমরা বলতে চাই, অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জবর দখল করা সরকার যে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে, তার শান্তিপূর্ণ সমাধান আমরা চাই।’’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বলছি, দেশকে ভয়াবহ সংকট থেকে উত্তরণের উদ্যোগ নিন। নইলে ভয়াবহ ও কঠিন পরিণতি হবে।”
সুন্দরবনের শেলা নদীতে তেলের ট্যাংকারডুবির ঘটনায় গঠিত বিএনপির ‘তদন্ত কমিটির’ প্রতিবেদন সম্পর্কে জানাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
নির্দিষ্ট সময়ের একদিন আগেই বুধবার রাতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে প্রতিবেদনটি জমা দেন ৭ সদস্যের ‘তদন্ত কমিটির’ প্রধান হাফিজ।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের জনসভার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
বকশীবাজারে বুধবারের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘‘কীভাবে ছাত্রলীগের গুণ্ডারা নিরস্ত্র মানুষের ওপর হামলা চালিয়েছে গোটা দেশবাসী মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছেন। বন্দুক-পিস্তল ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে তারা ২০০৭ সালের লগি-বৈঠার কায়দায় আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর আক্রমণ করেছে।’’
ওই সংঘর্ষের আগে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপিই অরাজকতা করেছে, আর এর উদ্দেশ্য ছিল সাংসদ ছবি বিশ্বাসকে হত্যা করা।
এর জবাবে ফখরুল বলেন, “গণমাধ্যমে পিস্তল হাতে ছাত্রলীগের ছেলেদের নামসহ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। একজন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যদি অসত্য বক্তব্য দেন, তাহলে দেশের শাসনব্যবস্থা কোথায় চলে গেছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।”
সাংসদ ছবি বিশ্বাসের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের গ্রেপ্তারে ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করেন ফখরুল।