বুধবার শুনানির নির্ধারিত দিনে চারটি আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা, কিন্তু একটিতেও সফল হননি তারা।
এরপর আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডার মধ্যেই পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এই আদালতে মামলার বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশীদের সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।
তবে চতুর্থ দিনেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি দুই কোটি টাকা আত্মসাতের এই মামলার প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্য। বিচারক ২৪ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রেখেছেন, সেদিন হারুনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষের আশা করা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগ, ‘হয়রানিমূলক’ এই মামলায় সাজা দিয়ে খালেদাকে নির্বাচন তথা রাজনীতি থেকে বের করে দিতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার।
বুধবার শুনানির পর বিএনপি নেত্রীর আইনজীবী জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, এই আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন না।
খালেদার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলাও বাসুদেব রায়ের আদালতে বিচারাধীন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ ও মামলাকারী দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবীদের অভিযোগ, বিচার বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে খালেদার আইনজীবীরা শুনানি মুলতবির জন্য একটির পর একটি ‘অযৌক্তিক’ আবেদন করে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালে করা এই মামলা বাতিল, বিচারককে নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেসব আবেদন নাকচ হওয়ার পর চলতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
এরপর ধার্য তিনটি তারিখে আদালতে ব্যাপক হট্টগোলের মধ্যে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ বাসুদেব রায়ের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলে বাদী দুদক কর্মকর্তা হারুনের।
বুধবার শুনানির শুরুতে খালেদার আইনজীবীরা বলেন, উচ্চ আদালতে এই মামলার বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তাই সাক্ষ্যগ্রহণ আপাতত মুলতবি রাখা হোক।
সকাল থেকে মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত এই বিষয়েই দুই পক্ষের আইনজীবীদের বাকবিতণ্ডা চলে। বিচারক আবেদন দুটি খারিজ করে দিলে তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফের উপস্থাপন করেন খালেদার কৌঁসুলিরা।
কিন্তু আসামিপক্ষ উচ্চ আদালতের কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ দেখাতে না পারায় তা খারিজ করে দেন বিচারক। দুপুরের পর দুদক কর্মকর্তা হারুন সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন, যা বিকাল পর্যন্ত চলে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে অর্থ আত্মসাতের এই মামলায় খালেদার ছেলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আসামি। লন্ডনে থাকা তারেকের পক্ষে আইনজীবীরা হাজিরা দেন।
মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক আমলা ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমান এই মামলার আসামি।
খালেদা অনুপস্থিত থাকলেও জামিনে থাকা সালিমুল ও শরফুদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কামাল সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলা করে দুদক।
দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন খালেদা, তারেকসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।