দায়ী আমিই: ড. কামাল

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা ‘ভয়াবহ’ দাবি করে এর জন্য নিজেকেই সবচেয়ে বেশি দায়ী করেছেন ড. কামাল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 02:58 PM
Updated : 1 Oct 2014, 02:58 PM

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম প্রবীণ এই আইনজীবী-রাজনীতিক বুধবার ঢাকায় এক গোলটেবিলে বলেন, “আজকে আমরা ভয়াবহ জায়গায় চলে এসেছি। অপ্রিয় কথা বললেও এর জন্য আমিসহ সকলেই দায়ী।

“আমি সবচেয়ে বেশি দায়ী। আপনারা আমার জন্য অনেক কথা বললেন, সবকিছুর জন্য আমাকে করতে বলেন; এজন্য আমি বেশি দায়ী।”

বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিচারঙ্গনে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয়তা থেকে এই হতাশা প্রকাশ করেন ড. কামাল।

“আজকের যে দল সেটা তো আমারই দল আওয়ামী লীগ। ৩০ বছর ধরে করেছি। বিএনপি ২০০৭ সালে জামায়াতকে নিয়ে ৩০০ আসন ভাগ করতে চেয়েছিল, আমরা ঠেকিয়ে দিয়েছি। ২০১৪ সালে এরা (আওয়ামী লীগ) করেছে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে ভোট বর্জনকারী গণফোরাম সভাপতির এই বক্তব্য।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জনের নির্বাচিত হওয়াকে ‘অসাধারণ’ মন্তব্য করে কামাল হোসেন বলেন, “আগামীকে ৩০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে হতে পারবে না?

“৫ জানুয়ারির ভোটেও ২০ শতাংশেরও কম ভোট দিয়েছে মানুষ। বাকি ৮০ শতাংশ শুধু বিএনপি-জামায়াত নয়; আমি, আপনি, সাধারণ মানুষ।”

সংবিধান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য বলেন, “সংবিধানই তো নেই। শুধু সংবিধান মেনে শপথ নেওয়া হচ্ছে। এ সংবিধান তো মেনে চলা হচ্ছে না।”

বিচার বিভাগে দলীয়করণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কামাল হোসেন বলেন, “আমার জন্যে এটা দুঃখজনক। বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। এটা হাই কোর্টেও হতে পারে কোনও দিন ভাবিনি। হঠাৎ করে হাতের বাইরে চলে গেছে।”

আইন পেশায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যোগ্যতা নেই, মেধা নেই; এরা পিউর অনুগত। পায়ের ধুলা নিয়ে আর্দিষ্ট হয়ে সব কাজ করে; কি বিচার বিভাগ, কি নির্বাহী বিভাগ।”

ষাটের দশকের রাজনীতির সঙ্গে এখনকার তুলনা করে এই রাজনীতিক বলেন, “ষাটের দশকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ-এমন শব্দও আমরা শুনিনি। আর এখন ছাত্রদল, ছাত্রলীগ-  এদের মধ্যে গুণগত কোনো পার্থক্য নেই। ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে অস্ত্র নিয়ে ছবি তুলছে, টেন্ডারবাজি করছে। আইনেরে ঊর্ধে চলে গেছে।”

বর্তমান অবস্থার বিশ্লেষণ করে আলোচনা হলেও তাতেই সমাধান আসবে না বলে ‘বিচারকদের অভিসংশন, ন্যায়বিচার ও সুশাসন’ শীর্ষক ওই গোলটেবিলের আয়োজকদের পরামর্শ দেন কামাল হোসেন। 

“এখন যে জায়গায় চলে গেছি এখান থেকে ব্যাক করতে শুধু কথা বললে হবে না। এখানে কথা বলে সবাই ঘরে ঘরে চলে যাবে, কিচ্ছু হবে না।”

এসব অনিয়ম প্রতিরোধে জনগণের ওপর ভরসা রেখেছেন কামাল হোসেন, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সমর্থনকারী হিসেবে যার সমালোচনায় মুখর তার পুরনো দল আওয়ামী লীগের নেতারা

“এদেশের সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি দিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষ অসাধারণ। এখনো দিয়ে যাচ্ছে।”

প্রতিরোধ সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হিসেবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।

“আমার প্রেরণার উৎস নূর হোসেন। একজন ভ্যানচালকের ছেলে। আমার থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে গুলি খেয়েছিল সে।”

জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগোনোর পরামর্শ দিয়ে কামাল হোসেন সবাইকে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘গুড গভার্নেন্স ফোরাম’ আয়োজিত এই গোলটেবিলে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমানে নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের ‘দুর্নীতি’ রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

“৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়নি, যা হয়েছে তা ভণ্ডামি, শঠতা, প্রতারণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।”

রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই গোলটেবিলে আরো অংশ নেন সিগমা হুদা, বিচারপতি সিকদার মকবুল হক,আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, একেএম শফিকুল ইসলাম খানম, দেলোয়ার এইচ খান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান ইকতেদার আহমেদ।