লতিফকে নিয়ে ‘ধূম্রজাল’ দেখছে বিএনপি

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে অপসারণ করা না হলে পূজা ও ঈদের পর কর্মসূচি দেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 06:47 AM
Updated : 1 Oct 2014, 07:39 AM

মন্ত্রীকে অব্যাহতি দেয়া নিয়ে সরকার ‘ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে’ বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার ২০ দলীয় জোটের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,  “ঈদ ও পূজার কারণে এখনই আমরা কোনো কর্মসূচি দিচ্ছি না। আমরা অবিলম্বে মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণ চাইছি। তা না হলে ঈদ ও পূজার পর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।”

ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অব্যাহতি দেয়ার একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচার হলেও তার কোনো ‘ভিত্তি’ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

“মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এই অব্যাহতির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। প্রধানমন্ত্রী কিছুই তাকে জানাননি। আমরা মনে করি, একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে জনরোষ থেকে বাঁচাতে এরকম প্রচারণা চালিয়ে সরকার ধূম্রজাল সৃষ্টি করছে।”

গত রোববার নিউ ইয়র্কে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।”

মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দায় মঙ্গলবারই তাকে বরখাস্ত করে গ্রেপ্তার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

একই দিনে বিএনপির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে বলেন, “তার লাগামহীন বক্তব্যকে ক্ষমতার শীর্ষ থেকে সবসময় উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে বলেই এখন তিনি এখন সকল সীমানা অতিক্রম করে পবিত্র হজ ও হাজীদের কটাক্ষ এবং মহানবী (সা:) সম্পর্কে বিদ্রুপাত্মক ভাষায় তাচ্ছিল্য করা ও তাবলিগ জামায়াতকে নিয়ে কটূক্তি করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন।”

এরপর রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে জোটের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জোটের মহাসচিবদের এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের পবিত্র হজ ও মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এ রকম মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ওই ব্যক্তি সারা বিশ্বের কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের বিশ্বাস ও অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছেন।”

তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মঙ্গলবার মেক্সিকো থেকে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, তিনি চাপের মুখে পদত্যাগ করবেন না।

একজন ‘স্বাধীন ও আধুনিক মানুষ’ হিসেবে হজ সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি কিছুই করব না। প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশ দেবেন আমি সেটা প্রতিপালন করব।”

এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, “ওই বক্তব্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রকৃত রূপ উন্মোচিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই অবৈধ সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না। কারণ ওই বক্তব্যের পরও লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি তার কথায় অনড় আছেন।”

লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণের পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার করারও দাবি জানান ফখরুল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ঈদ ও পূজার কারণে আমরা এই মুহূর্তে লতিফ সিদ্দিকীর অপসারণের দাবিতে কর্মসূচি দিচ্ছি না। তবে যেসব দল ও সংগঠন কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে।”

২০ দলীয় জোটের বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, “গতকালের বৈঠকে সারাদেশে গণসংযোগের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত  হয়েছে।”

সংকট উত্তরণে খালেদা জিয়ার ‘সংলাপের আহ্বানে’ সাড়া না দিলে ‘অবৈধ’ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

জোটের মহাসচিবদের মধ্যে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ,  জামায়াতের রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, খেলাফত মজলিশের আহমেদ আবদুল কাদের, জাগপার খোন্দকার লুৎফর রহমান, ডিএল-এর সাইফুদ্দিন মনি, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনডিপির গাজী রবিউল ইসলাম সাগর, বিজেপির সালাহউদ্দিন মতিন প্রকাশ, ইসলামী ঐক্যজোটের মুফতি রেজাউল করীম, জমিয়তে উলামা ইসলামের মুফতি তৈয়ব, লেবার পার্টির মাসুদ খান সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও আসাদুল করীম শাহিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।