মিলনায়তনে ভেতরে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিভক্তি নিয়ে কথা বলছিলেন তখন মিলনায়তনের বাইরে সংঘর্ষে লিপ্ত ছাত্রলীগের দুপক্ষ।
Published : 26 Aug 2014, 10:29 PM
মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ঘটনার পর রেলক্রসিং এলাকায় ছাত্রলীগের একাংশের সড়ক অবরোধের মুখে পড়ে মন্ত্রীর গাড়িবহর।
এমনকি প্রক্টরের গাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বাসেও ভাংচুর চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।
সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চবি শিক্ষক সমিতি।
দুপুর ১২টায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিতে শুরু করেন বেলা একটায়।
বক্তব্যে চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে যেভাবে অস্ত্রের ঝনঝনানি তাতে দাওয়াত দিলেও অনেকে আসবে না।
“এখানে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে মারামারিতে ব্যস্ত। গত কয়েকদিন নিজেদের মধ্যে মারামারি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত পুলিশ পিটিয়েছে। এখানে ছাত্রলীগ বিভক্ত, বিরোধীরা এক। একারণেই বিরোধী শক্তি কিছুদিন আগে তাদের ওপর হামলা করার সুযোগ পেয়েছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখা যাবে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই ছাত্রলীগের দু’পক্ষে সংঘর্ষ লেগে গেছে।
মন্ত্রী যখন এ বক্তব্য দিচ্ছেন তখনই মিলনায়তনের বাইরে ছাত্রলীগের চবি’র শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক সংগঠন ‘ভিএক্স’ এর অনুসারীরা আরেক বগিভিত্তিক গ্রুপ ‘সিএফসি’র অনুসারীদের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হয়। ভিএক্স অনুসারীরা সিএফসি’র অনুসারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। ধাওয়া খেয়ে সিএফসির নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় রেল ক্রসিং এলাকায় সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেয়।
অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে বেলা আড়াইটায় অবরোধের মুখে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী। এসময় সিএফসির অনুসারীরা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে, অন্য পক্ষ তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। মন্ত্রী বিষয়টি চবি প্রশাসনকে জানানোর আশ্বাস দিলে তার গাড়ি বহরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে অবরোধে আটকে পড়া শিক্ষক বাসগুলো লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে অবরোধকারীরা। এতে একটি শিক্ষক বাসের সামনের কাঁচ ভেঙ্গে যায়।
এসময় প্রক্টর সিরাজ-উদ-দৌলাহর গাড়িও ভাংচুর করা হয়।
সিরাজ-উদ-দৌলাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী জিয়াকে আমার গাড়িতে করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন। এ সময় গাড়িতে ঢিল ছোড়া হয়।”
এর আগে অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, এখানে (চবি) ছাত্র রাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতি একাকার হয়ে গেছে। কেন আপনাদের (শিক্ষকদের) পদোন্নতি ও ক্ষমতার জন্য ছাত্রদের বগিভিত্তিক রাজনীতির সাহায্য নিতে হবে? শিক্ষকরা মেরুদণ্ড সোজা করুন।
“শিক্ষকরা যদি শিক্ষকতার আদর্শ ধরে রাখেন তাহলে কেউ আপনাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে পারবে না। শিক্ষকরা রাজনীতি করবেন। কিন্তু যদি ছাত্র রাজনীতির সাথে তা জড়িয়ে ফেলেন তাহলে ছাত্র রাজনীতি নষ্ট হবে, শিক্ষক রাজনীতিও ধ্বংস হবে।”
বগিভিত্তিক গ্রুপিং এর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “যেভাবে ট্রেনের গায়ে ‘খাইট্টা খা’, ‘একাকার’, ‘সিক্সটি নাইন’সহ বিভিন্ন নাম লিখে রাখা হয়েছে তাতেই এখানকার ছাত্র রাজনীতির অবস্থা বুঝা যায় ।
“আপন ঘরে যার শত্রু তার আর শত্রু তৈরির জন্য বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। মাঝে মাঝে ভাবি এত গ্রুপ কারা?”
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমরা এখন ক্ষমতায়। অথচ বিরোধী শক্তি এখানে হলগুলো কিভাবে দখল করতে পারে?”
হল দখলমুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান মহিউদ্দিন।
চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বেনু কুমার দে’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিম্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, ডিনস কমিরি আহ্বায়ক অধ্যাপক ইমরান হোসেন, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহফুজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।