‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অশুভ ইংগিত’

মাঠেই দেখা হবে- এমন বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশে ‘রক্তাক্ত প্রান্তরের অশুভ ইংগিত’ দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2014, 09:39 AM
Updated : 28 July 2014, 12:01 PM

সোমবার সকালে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। সেজন্য এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মাঠেই দেখা হবে’ বলে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। এই বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বস্তুতপক্ষে রক্তাক্ত প্রান্তরেরই অশুভ ইংগিত দিলেন।”

গত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বর্তমান সরকারকে ‘অগণতান্ত্রিক’ আখ্যায়িত করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের জন্য সংলাপের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।

দাবি না মানলে ঈদের পর আন্দোলনে নামারও ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এর জবাবে শনিবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “মাঠে নামুক না, আমার আওয়ামী লীগ আছে। জনগণ আছে। মাঠের দেখা মাঠে হবে। তারা (বিএনপি) ট্রেন মিস করেছে। ট্রেন ছুটে চলে গেছে। আরেকটা ট্রেন আসুক অপেক্ষা করতে হবে।”

বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন গণতান্ত্রিক সাংবিধানিকভাবেই হবে।

ফাইল ছবি

এ প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যেখানে সরকারি শৃঙ্খলা অবিচারমূলক সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা সুবিচারের শুরু। দখলবাজদের দিয়ে কোনো মাঠেই আপনি খেলতে পারবেন না। অগ্নিপুত্র খেলোয়াড়দের দিয়ে লাশের স্তূপ বানাতে পারবেন, বিজয়ী হতে পারবেন না।

“গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মৃত্যুঞ্জয়ী আশাবাদ নিয়ে ঈদের পর হবে আমাদের আন্দোলনের কুচকাওয়াজ।”

সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “সব মাঠ থাকবে জনগণের দখলে। ক্ষমতাসীনদের বাছাই করা র‌্যাব-পুলিশের নিষ্ঠুর কর্মকর্তারা পার পাবে না। তারা এখন নিজেদের পাপে নিজেরাই ধরা খাচ্ছে। অপরাধী খুনী, আউটলরা কখনোই বেশিদিন আইনের আওতার বাইরে থাকতে পারে না। ওইসব খেলোয়াড়দের নিয়ে শেখ হাসিনা যে বড়াই করছেন, সেটির এবার চূড়ান্ত পরিণতি দেখবেন।”

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন রিজভী।

তিনি বলেন,  “বহুমাত্রিক দুর্দশাগ্রস্ত সাধারণ জনগনকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি অকপটে ডাহা মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে তুলে নিয়ে জিয়াউর রহমান সামরিক ফরমান জারি করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছেন। এটি টাটকা মিথ্যা কথা।”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব দাবি করেন, “জিয়াউর রহমান নন, বাকশাল গঠন করেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। ওই একদলীয় শাসনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদ থেকে তুলে নিয়ে একচ্ছত্র ক্ষমতাধর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল।”

রিজভী অভিযোগ করেন, পুলিশ রোজার মাসেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাসির নামে ‘গ্রেপ্তার-অভিযান’ চালাচ্ছে। বিরোধী মত দমনে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ চলছে। 

“বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ইতিহাসের নির্মাতা। বর্তমান অবৈধ সরকার ও তাদের আদুরে বিরোধী দল একটি সংঘবদ্ধ খুনীদের সিন্ডিকেট।…  এদের সাথে জুটেছেন হত্যা-খুনের আরেক নাটের গুরু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ঠাণ্ডা মাথায় প্রতিপক্ষকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে তার জুড়ি মেলা ভার।”

নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খায়রুল কবীর খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস লতিফ জনি, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুস সালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।