বিএনপির সঙ্গে আলোচনা কেন, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রশ্ন কেন বার বার তোলা হচ্ছে- সেটি তার বোধগম্য নয়।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2014, 07:18 AM
Updated : 25 July 2014, 09:03 AM

শেখ হাসিনার ভাষায়, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি যে ‘রাজনৈতিক ভুল’ করেছে, তার মাসুল তাদেরই দিতে হবে।

বিএনপি-জামায়াত পার্লামেন্টে থাক আর না থাক,  তাতে কিছু ‘আসে যায় না’ বলেও মনে করেন তিনি।

সম্প্রতি লন্ডন সফরে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেন শেখ হাসিনা। তার সাক্ষাৎকারের অডিও বৃহস্পতিবার বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

সরকারের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কোনো উদ্যোগ কেন দেখা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন,

“আমি একটা জিনিস বুঝি না, সবাই আলোচনা আলোচনা নিয়ে এতো ব্যতিব্যস্ত কেন। কারণ আমি বলি, আলোচনার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উদ্যোগ তো নিয়েছিলাম। নিজে টেলিফোন করেছিলাম। এবং সেই টেলিফোন করার পর যেটা হয়েছে সবাই জানে।”

তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, “এখন কোনো একটা রাজনৈতিক দল যদি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে ভুল করে, তার দায়-দায়িত্ব কার?”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হয়ে পড়ে বলেই বিএনপি ৫ জানুয়ারির ভোটে আসেনি।

“জামায়াত তো এখনো নিবন্ধন পায়নি, নিবন্ধিত হয়নি। আর জামায়াত যতোক্ষণ নিবন্ধন না পাবে, বিএনপি জামায়াতকে ছাড়া ইলেকশন করবেও না।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এখন সংসদে না থাকলেও ‘বহু বছর পর’ এখন সংসদে বিরোধী দল আছে।

“অন্ততপক্ষে তারা পার্লামেন্টে থাকে, আর পার্লামেন্ট এখন গালমন্দ, ওই যে অকথ্য ভাষায় কথা বলা- এই সব অসভ্যতা এখন আর পার্লামেন্টে নাই। ”

জাতীয় পার্টি ‘সত্যিকারের বিরোধী দল’ হতে পারেনি- এমন অভিযোগও নাকচ করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “অবশ্যই (জাতীয় পার্টি) বিরোধী দল। এই উদাহরণ পৃথিবীর বহু দেশে আছে।  হ্যাঁ আমি চেয়েছি, অপজিশন বা অন্যান্য প্রত্যেক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আমি সরকার গঠন করতে চেয়েছি। কেন চেয়েছি? আমার একটাই উদ্দেশ্য, দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। পার্লামেন্ট কার্যকর থাকবে। আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতে পারব সকলের সহযোগিতা নিয়ে। ”

গত সরকারে বিরোধী দলে থাকা বিএনপি-জামায়াত জোটের সংসদ বর্জনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া যখন বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন, উনি পার্লামেন্টে কতোদিন ছিলেন? ৪১৮টা কার্যদিবস ছিল। উনি মাত্র ১০ দিন পার্লামেন্টে ছিলেন। তো তার জন্য এতো আহাজারি কেন?”

তিনি বলেন, আগের সরকারের মেয়াদ শেষে সাংবিধানিক নিয়মেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হয়েছে।  অথচ বিএনপি তাতে অংশ না নিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে নাশকতা চালিয়েছে।

“তারা যে ইলেকশনে আসল না, তার জন্য সকলের এতো কান্নাকাটি কেন, এটা তো আমার কাছে বোধগম্য না।”

আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে- সে বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,

“আমরা ইলেকশন করেছি, সরকার গঠন করেছি, পার্লামেন্ট চলছে, অপজিশন থাকছে, কথা বলছে… একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

“এখন যারা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত, যারা জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত… জামায়াতে ইসলামীর অধিকাংশ নেতা যুদ্ধাপরাধী; তাদের বিচার করছি আমরা। সেই জামায়াত নেতাদের বাঁচাবার জন্য যারা মানুষ হত্যা করছে, এখন তাদের আনার জন্য আমাদেরকে যেয়ে তাদেরকে একেবারে আহ্বান করতে হবে, আলোচনা করতে হবে- এই করতে হবে, কেন এই প্রশ্ন আসে বার বার? কেন?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই’ হয়েছে।  কোন ‘অসাংবিধানিক’ সরকার দেশের মানুষ চায় না।

আওয়ামী লীগ দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে বলে বিএনপির যে অভিযোগ- তাও অস্বীকার করেন শেখ হাসিনা। 

তিনি বলেন, “এই বিবিসিতে যখন বিএনপির কোনো নেতা কথা বলে, আমরা এসে কি তার গলা টিপে ধরি?

“এখন ২৭টা বেসরকারি টেলিভিশন চলছে। প্রতি রাতে বিএনপির নেতারা সেখানে গিয়ে কথা বলছে। তাদের কাজই হচ্ছে, মাইক একটা লাগিয়ে সারাক্ষণ টেলিভিশনের সামনে… একজন না, প্রতিদিন অন্তত পাঁচজন কথা বলছে এবং সরকারকেই গালি দিচ্ছে, আমাকে গালি দিচ্ছে। দিয়েই যাচ্ছে, দিয়েই যাচ্ছে। আমরা কি তাদের মুখটা বন্ধ করে দিয়েছি স্কচটেপ মেরে?”

জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে বলেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। রায় না পাওয়া পর্যন্ত সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ নেই।

“যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তাদের বিচার হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী হিসাবে তাদের নিয়ে সমগ্র বাংলাদেশের যে মনোভাব, আমারো সেই মনোভাব। যে অপকর্ম তারা করে গেছে তার বিচার- এটা তো দেশের মানুষের দাবি।”

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সরকারের আগ্রহ আর আগের জায়গায় নেই- এমন অভিযোগও প্রধানমন্ত্রী অস্বীকার করেন।  তিনি বলেন, সরকারের ‘কমিটমেন্টে’ কোনো ‘হেরফের’ হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

তিনি প্রশ্ন করেন, “আমি যদি সরকারে না থাকতাম, বাংলাদেশে কার সাহস ছিল এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে এবং তাদের শাস্তি দেয়?”

গত বছর সরকারের অবস্থানের বিপক্ষে আন্দোলন করা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে এখন সম্পর্ক কেমন- এ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সাথে সবার ভাল সম্পর্ক। যদি বিএনপির সাথেই কথা বলতে পারি, তাহলে আর কার সাথে খারাপ থাকবে? কারো সাথেই খারাপ না।”