‘তারেককে আহাম্মক বলা গণতন্ত্রের ভাষা নয়’

সংসদে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘আহাম্মক’ ও ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদদের সমালোচনা করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2014, 07:14 PM
Updated : 11 April 2014, 07:14 PM

শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “গতকাল সংসদে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্যরা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে ‘তুই- তোমার’ সম্বোধন করে তার পরিবারকে টেনে এনে যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন তা গণতন্ত্রের ভাষা নয়।

“সিনিয়র নেতারা এ ভাষায় কথা বলতে পারেন তা জানা ছিলো না।”

ফাইল ছবি

সম্প্রতি লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম ‘অবৈধ’ প্রধানমন্ত্রী বলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।

এর প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আরে আহাম্মক, লেখাপড়া জানে না। তোর বাপ কি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিল? তোর বাপ আমাদের ‘স্যার’ বলতে বলতে মুখে লালা বেরিয়ে যেত।”

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের অন্য কয়েক সদস্য তারেকের ওই বক্তব্যের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

তাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে রফিকুল ইসলাম বলেন, “ভোট ছাড়া সংবিধান বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের জন্য এই সংসদ গঠন করা হয়েছে। একদলীয় সংসদে বসে এতো দম্ভ করছেন? আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, একজনের অনুপস্থিতিতে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় সংসদে অসত্য বক্তব্য রাখা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।”

তারেকের বক্তব্য সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “লন্ডনের একটি সেমিনারে তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তার জবাব আওয়ামী লীগ দিতেই পারে। কিন্তু যে ভাষায় সংসদে তার ও তার পরিবার সম্পর্কে সরকারি দলের সিনিয়র সদস্যরা কথা বলেছেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কোনো সংসদে বক্তব্য রাখা যায় না।”

তিনি বলেন, “জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানসহ কারো অবদানকে খাটো করতে চাই না। উনি (শেখ মুজিব) বড় মাপের নেতা ছিলেন, এতে সন্দেহ নেই।

“তিনি না হলে স্বাধীনতা হতো কি না বলতে পারি না। কিন্তু এটাও সত্য যে, তিনি পাকিস্তান মেনে নিয়ে ‘৭০ এর নির্বাচন করেছেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি।”

দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল মাহমুদুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মাহমুদুর রহমানকে ‘অন্যায়ভাবে’ কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে দাবি করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “আদালত অবমাননার জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে মাহমুদুর রহমান সাহেবের। এখনো সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশের রায় প্রকাশ করেনি।

“আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির কাছে জানতে চাই, জনাব মাহমুদুর রহমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হলেও ছয় মাসের মধ্যে এখনো রায়ই প্রকাশ পায়নি। এর ফলে মাহমুদুর রহমান ওই দণ্ডের বিরুদ্ধে ‘রিভিউ’ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে কি সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে না?’’

মাহমুদুর রহমান মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রেজাউল কবির সিকদার রেজার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ক্ষমতায় থাকতে দমননীতি

সরকার ‘জোর করে’ ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে বলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আরেকটি আলোচনা সভায় মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। 

তিনি বলেন, “এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী দলের ওপর দমননীতি অবলম্বনকে কৌশল হিসেবে নিয়েছে। তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দিয়ে রেখেছে। এখন ওই সব মামলায় যখন প্রয়োজন তখন নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।”

এ থেকে উত্তরণে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে নেতা-কর্মীদের ‘সর্বাত্ম প্রস্তুতি’ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই সভা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইয়াসীন আলীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুনির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু এবং মহানগর উত্তরের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন মুন্না বক্তব্য দেন।