আগামীতে ঢাকায় আসতেও দেবো না, হেফাজতকে আশরাফ

অরাজকতা সৃষ্টি না করতে হেফাজতে ইসলামকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2013, 05:31 AM
Updated : 5 May 2013, 06:41 PM

রোববার বিকালে মতিঝিলে হেফাজতের সমাবেশ চলার সময়ই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংগঠনটিকে সমাবেশের পরপরই ঢাকা ছাড়ার আহ্বান জানান।

গণজাগরণবিরোধী হেফাজতকে হুঁশিয়ার করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আশরাফ বলেন, “এবার ঢাকায় আসতে দিয়েছি, এরপর ঢাকায় আসতেও দেবো না, ঘর থেকে বের হতে দেবো না। সরকার কিন্তু আর বরদাশত করবে না।”

১৩ দফা দাবিতে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে ঢাকা অবরোধের পর দুপুরে মিছিল নিয়ে মতিঝিলে সমবেত হয় হেফাজতকর্মীরা।

এর মধ্যে দুপুরের পর সমাবেশমুখী একদল কর্মীর সঙ্গে গুলিস্তানে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। এরপর পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর চালায় হেফাজতকর্মীরা, আগুন দেয় সিপিবি ভবনসহ অনেক দোকানে।

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আশরাফের সংবাদ সম্মেলনের সময়ও সংঘর্ষ চলছিলো। বিকালে তা কাকরাইল ও নয়া পল্টনেও ছড়িয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হেফাজতের উদ্দেশে বলেন, সরকারের উদারতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। “শান্তিপূর্ণ আহ্বান আমাদের দুর্বলতা নয়।

“সরকারের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এটা করতে যা যা করার, তা করতে সরকার প্রস্তুত।”

সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ছাড়তে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আশরাফ বলেন, তা না হলে যা যা করা দরকার, সরকার তার সবই করবে।

আশরাফের বক্তব্যের পরপরই মতিঝিলের সমাবেশ থেকে হেফাজতের এক নেতা পাল্টা হুঁশিয়ারি দেন, “আমাদের সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ছাড়তে বলেছেন, আপনাদেরই ঢাকা ছাড়তে হবে।”

এরপর টানা অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে হেফাজতকর্মীরা মতিঝিলে অবস্থান নিলেও ভোররাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের তুলে দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের উদ্দেশে আশরাফ বলেন, “আপনাদের রক্ত চক্ষুকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না।আমাদের দুর্বল ভাববেন না। আপনাদের শায়েস্তা করতে আ. লীগই যথেষ্ট।”

হেফাজতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে সোমবার সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ, ঢাকায় বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ হবে।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনকারীদের বিরোধিতা করে রাজপথে নামা হেফাজতকে ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মা’ বলে আখ্যায়িত করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। হেফাজতকে ‘আল-বদর’ ও ‘রাজাকারদের’ উত্তরসূরিও বলেন তিনি।

“তারা ধর্মের নামে যে তুলকালাম করছে, বাংলাদেশের মানুষ তা বরদাশত করবে না। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। পশুশক্তি নয়, আত্মশক্তিই সরকারের শক্তি। আমরা যে কোনো ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।”

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল কথা না বলতে হেফাজত নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আশরাফ।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

গত কয়েকমাস ধরে আলোচনায় উঠে আসা হেফাজতে ইসলাম রাজনীতির কেন্দ্রে আসতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করছেন, হেফাজতের পেছনে বিএনপি ও জামায়াতের মদদ রয়েছে; যদিও চট্টগ্রামভিত্তিক এই সংগঠনটি এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

শনিবারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের সমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণে সরকারকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়া এবং রোববার হেফাজতের ঢাকা অবরোধের মধ্যে কোনো সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে আশরাফ বলেন, “কাকতালীয়।”

পরক্ষণেই তিনি বলেন, “ডিজাইন করেই করা হয়েছে।”

শাহবাগের আন্দোলনকারী তরুণদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তি দাবিতে আন্দোলনে নামা হেফাজতে ১৩ দফা দাবি তুলেছে। তাদের এই দাবি নারীদের  অগ্রযাত্রা ব্যাহত করবে বলে ব্যাপক সমালোচনাও রয়েছে।