ঢাকা, ডিসেম্বর ১৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বলেছেন, সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ না করে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করায় নাগরিকরা নানা সমস্যায় পড়ছেন।
এ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নকল ও জালিয়াতির প্রবণতা বেড়েছে বলেও মনে করেন সিইসি এটিএম শামসুল হুদা।
তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে 'জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০০৯' এর আলোকে শিগগির একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে 'জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার' বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় শামসুল হুদা এ কথা বলেন।
এ সভার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিইসি বলেন, "দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রায় সাড়ে ৮ কোটি ভোটারের ডাটাবেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রায় ২৫টি খাতে এ ডাটাবেজ ব্যবহার করা সম্ভব। যে সব খাতে নানা দুষ্কর্ম হয় যেমন ব্যাংক একাউন্ট খোলা, জমি কেনাবেচা করা, এ ধরনের কাজে জালিয়াতি ঠেকাতে নাগরিকদের পরিচয় জানা দরকার।
"এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার ডাটাবেজ ব্যবহার করা হলে জালিয়াতি অনেকাংশেই বন্ধ হবে।"
কমিশনের ডাটাবেজটি শতভাগ নিখুঁত জানিয়ে তিনি বলেন, "এটা ব্যবহার করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।"
ছবিসহ ভোটার তালিকার অধীনে প্রথমবারের মতো ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করে ইসি। এ পর্যন্ত দেশের সাড়ে আট কোটিরও বেশি ভোটার তা সংগ্রহ করে।
জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল বা প্রদর্শন বাধ্যতামূলক না করার জন্য গত বছরের জানুয়ারি মাসে ইসি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অনুরোধ জানায়।
কিন্তু ব্যাংক, পাসপোর্ট, দূতাবাস ও বিভিন্ন সংস্থা তা বাধ্যতামূলক করে।
সিইসি জানান, এখনও অনেককেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য এনআইডি বিশেষ সহায়ক। অনেক গরীব লোক আছে যারা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হন। ৫৪ ধারায় হয়রানি করা হয়। এনআইডি থাকলে তার পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে ১৮ বা তদুর্ধ বয়সীদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। সেবা পেতে কমবয়সীদের বিষয়টিও ইসি চিন্তা করছে বলে জানান এটিএম শামসুল হুদা।
"কমিশন ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিকদের পরিচয়পত্র দিয়েছে। ফলে সব ক্ষেত্রেই এটা বাধ্যতামূলক করা হলে কিছু সমস্যা হবে। কিভাবে এ সমস্যা কমানো যায় তা নির্ধারণ করতেই কমিশন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করছে। তবে কমিশন এমন কিছু করবে না যাতে জনগণ কষ্ট পায়, তাদের ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়।"
সতর্কতার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে সিইসি বলেন, "কারো পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কমিশন তা বিনামূল্যে দিচ্ছে। তবে আগামীতে তা বন্ধ করা হবে। পরিচয়পত্র হারালে নির্ধারিত জরিমানা দিয়েই তা সংগ্রহ করতে হবে।"
জরিমানার পরিমাণ পরে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে সিইসি জানান, ২০১১ সালের জুন থেকে কমিশন পুরোপুরিভাবে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করতে সমর্থ হবে। এ সময়ের মধ্যে সারাদেশেই সার্ভার স্টেশনগুলো পুরোপুরি চালু হবে। দেশের যে কোন স্থান থেকে তখন নাগরিকরা জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে পারবেন।
"এর আগে ১ ফেব্র"য়ারি এ পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে কোনো একটি উপজেলায় চালু করা হবে", বলেন তিনি।
সিইসির সভাপতিত্বে এ মত বিনিময় সভায় দুই নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও এম সাখাওয়াত হোসেন, কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক, পুলিশ, গোয়েন্দা, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, র্যাব, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমএইচসি/কেএমএস/পিডি/২০৪৯ ঘ.