শনিবার বিকালে এক ব্রিফিঙে দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ আল নোমান এই অভিযোগ করেন।
জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া মৌসুমের দ্বিতীয় দফায় বন্যায় ভাসছে দেশের উত্তরাঞ্চল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজনীন শামীমা জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ২৭ জেলার ১৩৩ উপজেলা ও ৪৩টি পৌরসভা এ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি দেখতে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিনাজপুর ও কুড়িগ্রাম যাওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে বিএনপি নেতা নোমান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কাল(রোববার) কুড়িগ্রাম যাবেন। আমাদের সমস্ত রিলিফ কার্য্ক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো কার্য্ক্রম বৃহত্তর রংপুরে-দিনাজপুরে করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটার জন্য আমরা গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা ঘৃণা জানাই।
“যেখানে মানুষ মরছে, প্রতিদিন লাশ পাওয়া যাচ্ছে সেই জায়গায় আমরা রিলিফ বন্টন করব- সেটা করতে বাধা প্রদান করা, এ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জনগণের ওপরে কেন- আমরা তা জানি না।”
এক প্রশ্নের জবাবে নোমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে নওগাঁওয় রিলিফ কার্য্ক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, দিনাজপুর ও রংপুরেও তাই।
“অনেক জায়গায় রিলিফ দিতে গিয়ে নেতাকর্মীরা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছেন, তারা প্রহৃত হয়েছেন। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কুড়িগ্রাম যেতে চেয়েছেন, তাকেও আগেই প্রশাসন বলে দিয়েছে যে ২১ তারিখের আগে সেখানে না যেতে। কয়েকদিন ধরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন বন্যা কবলিত এলাকায় ছিলেন, আজকে এসে তিনি জানালেন যে তাকেও স্থানীয় থানা ডেকে বলে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সফর আছে, চলে যেতে। উনি চলে এসেছেন।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সভা শেষে এই সংবাদ ব্রিফিং হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় বন্যা পরিস্থিতি, দলের ত্রাণ তৎপরতা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়।
‘ত্রাণ দিতে গিয়ে মন্ত্রীদের ভোজনবিলাস’
ত্রাণবিতরণে গিয়ে মন্ত্রীরা ‘রুই মাছের মাথা’ খেয়ে ভোজন বিলাসে ব্যস্ত জানান আবদুল্লাহ আল নোমান।
তিনি বলেন, “দুঃখের সাথে বলতে হয়, এই সরকারের মন্ত্রীরা ত্রাণ দিতে গিয়ে সেখানে রুই মাছের মাথা খায়। কিন্তু ত্রাণ তারা সেভাবে দিতে পারে নাই।
“সারাদেশে টেলিভিশনে ও বিভিন্ন মিডিয়াতে আমরা দেখছি, হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, হাজার হাজার একর জমি তলিয়ে গেছে, কোথাও সেসব এলাকায় কোনো নৌকা-সাম্পান দিয়েও রিলিফ দেওয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হয় নাই। কেন হয়নি আমরা সেটা জানি না?”
বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় দলের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “বন্যার এই সংকট অনেকদিন থাকবে। পার্টির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে আমরা একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যতদিন পর্যন্ত বন্যাকবলিত মানুষের এই দুর্দশা থাকবে, ততদিন আমরা নেতৃবৃন্দ দুর্গতদের পাশে দাঁড়াব, তাদের সার্বিক সহায়তা আমাদের সীমিত শক্তির মধ্যে করার চেষ্টা করব।”
আবদুল্লাহ আল নোমান জানান, বন্যার্তদের জন্য দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেরা নাজমুল এক লাখ টাকার চেক এবং চট্টগ্রামের নাজমুল মোস্তফা আমিন নগদ ৫০ হাজার টাকা কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির কাছে হস্তান্তর করেছেন। এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন জন মোট ১০ লাখ টাকা অনুদান সভা চলাকালে দিয়েছে।
দলের নয়া পল্টনের পূবালী ব্যাংক শাখার চলতি হিসাব নং ২১৯১১- এ যে কেউ অর্থ দিতে পারবেন বলে জানান প্রধান সমন্বয়কারী।
সংবাদ ব্রিফিঙে কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, ত্রাণ কমিটির সদস্য সচিব হাজী আমীনুর রশিদ ইয়াসিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।