পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন প্রধান বিচারপতি: হাছান

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে রায়ের পর্যবেক্ষণে এস কে সিনহা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলছেন, তিনি প্রধান বিচারপতির পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2017, 11:27 AM
Updated : 17 August 2017, 11:31 AM

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান বলেন, “আমাদের দেশের সংবিধানে লেখা আছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। সুতরাং কোনো মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে যখন এর ব্যত্যয় ঘটে, তখন সেটি সুস্পষ্টভাবে সংবিধান লঙ্ঘন।

“প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। কোনো বিচারপতি যখন সংবিধান লঙ্ঘন করেন, শপথ ভঙ্গ করেন, তখন তিনি বিচারপতি থাকার যোগ্যতা হারান। মাননীয় প্রধান বিচারপতি এখন বিচারপতি থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।”

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের ৫৪তম পৃষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পর্যবেক্ষণ অংশে বলা হয়েছে, “কোনো জাতি বা রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে নিয়ে বা একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় না।”

তার এই ভাষ্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্বীকার করার মতো বলে অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত ওই আলোচনায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল বিভাগের এই রায় এবং রাজধানীতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফাইল ছবি

তিনি বলেন, “প্রধান বিচারপতি বিরোধী শক্তিদের কাছে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার তুলে দিয়েছেন। সেটিকে পুঁজি করে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ১৫ অগাস্ট একটি ঘটনা ঘটিয়ে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যেটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছে।

“সুতরাং কোনো ঘটনা কোনো ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এই ঘটনা এবং ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় একই সূত্রে গাঁথা, একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।”

জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবি ও নব্য জেএমবি জামায়াতের নেতাকর্মী দ্বারা সৃষ্টি বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক।

“৩২ নম্বরের বাড়ির মাত্র ৩০০ মিটার দূরে যে জঙ্গি নিজেই বোমা ফাটিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দিলেন, সে ইসলামী ছাত্রশিবির করতে। তার বাবাও জামায়াতের বড় নেতা। সুতরাং তারা যে জেএমবি বা নব্য জেএমবি নাম নিয়ে বিএনপির সাথে যুক্ত নয়, সেটি ভাবার কারণ নেই।

“নব্য জেএমবি বলেন, আর জেএমবি বলেন, তারা সব জামায়াতের নেতাকর্মীদের দ্বারা সৃষ্টি। খোলস পালটিয়ে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা জেএমবি নব্য জেএমবি হয়েছে। আর এদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।”

বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপির কোনো রাজনীতি নাই। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনীতি কিছুক্ষণ তেল-গ্যাস রক্ষা নিয়ে, কিছুক্ষণ ফরহাদ মজহারকে নিয়ে।

“এখন দেখতে পাচ্ছি ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে রাজনীতি, অর্থাৎ নিজেদের কোনো রাজনীতি নেই। অন্যের উপর ভর করে, অন্যের ইস্যু ধার করে তারা রাজনীতি করছে।”

বন্যার্তদের সাহায্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এখন একটি বিপদ রয়েছে, সেটি হচ্ছে বন্যা। আমি আমার দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীদের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করব, আহ্বান জানাব। যার যা সামর্থ্য রয়েছে, সেটি নিয়ে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করুন। ”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে বসে ‘ফের ষড়যন্ত্র’ করছেন বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বর্তমানে বিপদ হচ্ছে বন্যা, আর আপদ হচ্ছে খালেদা জিয়া। কারণ তিনি সব সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

“পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে তিনি বাংলাদেশের মানুষের পাশে আবির্ভূত হয়েছেন, দিনের পর দিন হরতাল ডেকে আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছেন। আর এখন লন্ডনে তার পুত্রের সঙ্গে বসে আবার আপদ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।”

বিএনপি-জামায়াত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান বলেন, “ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিল, আজকেও শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি জামায়াত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।”