শনিবার সকালে এই অভিযান চালানোর সময় পুলিশ বলেছিল, আদালতের পরোয়ানা নিয়েই তারা অভিযান চালাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপি অভিযোগ করেছে, অজ্ঞাতনামা একটি জিডির ভিত্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ করার জন্য পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছে।
আকস্মিকভাবেই শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অভিযান শুরু করে পুলিশ।
ওই কার্যালয়ের কর্মী সোহরাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পুলিশ সদস্যরা প্রথমে কার্যালয়ের সামনের ৮৬ নম্বর সড়কের দুই প্রান্ত আটকে দেয়। এরপর শুরু হয় তল্লাশি।”
অভিযানের আগে গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে আদালতের নির্দেশনা আছে এই কার্যালয়ের ভেতরে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কিছু আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার। ওয়ারেন্ট রয়েছে, তা অনুযায়ী তল্লাশি শুরু করেছি।”
অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই দিন আগে খালেদার এই কার্যালয়ে এক ট্রাক বই আনার খবর তারা পেয়েছেন। সেই বইকে ঘিরে তাদের সন্দেহ হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অভিযানের পর ওসি আবু বকর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়, সে রকম কিছু পাওয়া যায়নি।”
সোহরাব জানান, প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুলিশ কার্যালয়ে ঢোকে। ঢুকেই তারা কার্যালয়ের চারজন কর্মীর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় পুলিশ ভাঙা তালাটি নিয়ে যায়।
অভিযান শেষে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সড়কে বসানো ব্যারিকেড তুলে নেয় পুলিশ।
তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএমপির গুলশান জোনের উপ কমিশনার মোস্তাক আহমেদ।
পুলিশ বেরিয়ে যাওয়ার পর কার্যালয়ে ঢুকে দেখা যায়, নিচের তলা ও দোতলায় দুটি সিসি ক্যামেরার মূখ ঘুরিয়ে রাখা হয়েছে। দোতলা ও তিন তলায় কাগজপত্র, ফাইলপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এই কার্যালয়ের দোতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কক্ষ।
অভিযানের সময় বিএনপির কোনো নেতা সেখানে ছিলেন না। খবর পেয়ে প্রথমে উপস্থিত হন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
এরপর আসেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ।
রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশ যাওয়ার সময় বলে গেছে, ‘তল্লাশি অভিযানে প্রাপ্তি শূন্য’।”
পুলিশের এই অভিযানকে ‘পুলিশি হানা’ আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
“এই হানা সরকারের অগণতান্ত্রিক মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির জিডির পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান চালানো হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে।”
“সারাদেশে খুন-গুম-হত্যা, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা ব্যর্থতা আড়াল করতেই সরকার এই অভিযান চালিয়েছে,” বলেন রিজভী।
পুলিশি অভিযানের প্রতিবাদে যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এস এম জাহাঙ্গীর, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে।
যুবদলের পক্ষ থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে রোববার বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
পরে রিজভী বিএনপির পক্ষ থেকেও রোববার সারাদেশে বিক্ষোভর কর্মসূচি সাংবাদিকদের জানান।