খালেদার রূপকল্প আমাদেরটা চুরি করে: ওবায়দুল কাদের

নয় বছর আগে আওয়ামী লীগের দেওয়া ‘ভিশন ২০২১’ এর অনুকরণে খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছেন দাবি করে তার বিরুদ্ধে মেধাস্বত্ব চুরির অভিযোগ করেছেন ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2017, 03:35 PM
Updated : 10 May 2017, 04:41 PM

বিএনপি চেয়ারপারসন বুধবার সংবাদ সম্মেলনে রূপকল্প ২০৩০ ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলন করে দলের প্রতিক্রিয়া দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।

খালেদা জিয়ার এই ‘ভিশন-২০৩০’ ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাপানো রঙিন বেলুন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “ এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এটা জাতির সাথে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

আওয়ামী লীগের মেধা ‘চুরি’ করে বিএনপি নেত্রী এটা তৈরি করেছেন দাবি করে কাদের বলেন, “পরের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা এক ধরনের পলিটিক্যাল ডিজঅনেস্টি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেওয়া আইডিয়া  ও থট নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে! তারা ইমিট করতে পারে, কিন্তু ইনোভেট করতে পারে না।”

নবম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০০৮ সালে জাতির সামনে ‘ভিশন ২০২১’ নিয়ে এসেছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা দলটি ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন ভোটে বিজয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ শাসন করছে।

ওই রূপকল্প সামনে রেখেই বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “তার আগে কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোনো ধরনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেনি। জনগণ ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’  তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ- এর ওপর আস্থা স্থাপন করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে।”

“এরপর বাংলাদেশের জনগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে গত নয় বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কী ‘ভিশন’ থাকা উচিত। জননেত্রী শেখ হাসিনা শুধু কাগজে কলমে নয়, স্বপ্নে নয়, বাস্তব অর্থেই তার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করে চলছেন, যার প্রতিফলন আজকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এই ভিশন-২০২১ এর কারণেই আজ বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।”

জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে উন্নীতের আশা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

বিএনপির রূপকল্পকে অন্তঃসারশূন্য দাবি করে তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার আজকের এই ভিশন-২০৩০ একটি মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন।

“মূলত এই বিএনপি এবং তার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার সহযোগী ও বেনিফিশারি হিসেবে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল না করলে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসনকে হত্যা না করলে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ  রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হত এবং খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগের আইডিয়া চুরি করে জাতিকে ছবক দিতে হত না।”

বিএনপি চেয়ারপারসন দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের যে কথা বলেছেন তার সঙ্গে দ্বিমত জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশ  যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত নয়, ভৌগোলিক আয়তনের দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। এখানে কোনো প্রদেশ নাই যে, এখানে একটি ফেডারেল গভর্নমেন্ট কার্যকর আছে। এটা নিয়ে স্বয়ং বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মতবিরোধ হয়েছে, যা আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। ”

ওবায়দুল কাদের (ফাইল ছবি)

তার এই পরিকল্পনার পিছনে অন্য কাউকে খুশি করার উদ্দেশ্য রয়েছে কি না সে প্রশ্ন তুলে আওয়ামীগের এই নেতা বলেন, “খালেদা জিয়া দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট দাবির মাধ্যমে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করতে চায়। আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা স্বত্ত্বেও তিনি এ ধরনের ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে কাদের খুশি করতে চান?”

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতায়’ ভারসাম্য আনার যে ঘোষণা খালেদা জিয়া দিয়েছেন, তার মূলে অন্য পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে করছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।

“উনি কী করে রাষ্ট্রপতিকে সম্মান দেবেন? ক্ষমতায় থাকতে তো তিনি তার দলের রাষ্ট্রপতিকে বিনা কারণে অপসারণ করেছিলেন। দেশবাসী ভুলে যায়নি যে, বিএনপির সন্ত্রাসীদের হামলায় রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী জীবন বাঁচাতে মহাখালীর রেললাইন ধরে পালিয়ে ছিলেন। তার কথায় মনে হয়, তিনি রাষ্ট্রপতি আর তার দুর্নীতিবাজ পুত্র তারেককে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চান।”

প্রতিবারের মতো এবারও বিএনপি প্রধান যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তিনি (খালেদা)  স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে আছেন এবং পক্ষেই থাকবেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাথে নিয়েই তারা রাজনীতি করবে। তাদের ভিশন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার ভিশন, সন্ত্রাসবাদ কায়েমের ভিশন, দেশ বিক্রির ভিশন।”

পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বিএনপি নেত্রী ‘মায়াকান্না’ করেছেন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি তাকে প্রশ্ন করতে চাই, তথাকথিত অবরোধের জন্য আপনার দলের নেতা-কর্মীরা যখন ২৮ জন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন তখন আপনার ভিশন কী ছিল?

“আপনি তো, ২০১৩  থেকে ২০১৫ সালের সময় অবরোধের নামে বোমা মেরে মানুষ ও পুলিশ হত্যা, সম্পদহানিসহ নাশকতা, নৃশংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন। বোমায় দগ্ধদের এবং নিহতদের পরিবারের কাউকে সমবেদনা জানানো দূরে থাক, কোনো প্রকার শোক প্রস্তাবেও তাদের নাম উল্লেখ করেননি। ” 

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ কে এম এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি উপস্থিত ছিলেন।