প্রধানমন্ত্রীর ‘একক ক্ষমতায়’ ভারসাম্য চান খালেদা

আগামীতে ক্ষমতায় যেতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ‘একক নির্বাহী ক্ষমতা’য় ভারসাম্য আনার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সাংবিধানিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার কথা বলেছেন তিনি।

সুমন মাহমুদ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2017, 10:59 AM
Updated : 11 May 2017, 01:15 PM

বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ২৫৬টি দফার এই রূপকল্প তিনি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। এর নাম তিনি দিয়েছেন ‘ভিশন ২০৩০’।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, “নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার, অর্থ্যাৎ একটি যথার্থই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে” এই ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হবে।

জোটের শরিক নেতৃবৃন্দ, কয়েকটি দেশের মধ্যম সারির কূটনীতিক ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতিতে টানা দুই ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেন, “কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি প্রতিহত করবে।”

এই ‘ভিশন’ বাস্তবায়নে তিনি দেশবাসীর ‘সক্রিয় সমর্থনের’ পাশাপাশি ‘উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানসমূহের  সহযোগিতা’ পাওয়ার আশার কথা বলেছেন। অবশ্য রূপকল্পের বদলে এর সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহারেরই মিল পাওয়া যায় বেশি।

সংবাদ সম্মেলনের পরে অতিথিদের আপ্যায়নের সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে খালেদা জিয়া বলেন, তার দুই ঘণ্টার এই বক্তৃতা মানুষ টেলিভিশনে সরাসরি দেখেছে, তিনি তাতে খুশি। তবে সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন তিনি নেননি।

 

ক্ষমতার ‘ভারসাম্য’, সাংবিধানিক সংস্কার

বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা এককভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত- এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেশবাসী গভীরভাবে উপলব্ধি করছে যে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে।

“বিদ্যমান অবস্থার অবসানকল্পে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে।”

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধানের পঞ্চদশ ও ষষ্ঠদশ সংশোধনীর মাধ্যমে কয়েকটি ‘অগণতান্ত্রিক বিধান’ যুক্ত করেছে অভিযোগ করে সেগুলো ‘পর্যালোচনা ও পুনঃপরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার’ করার অঙ্গীকারের কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। 

তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের ‘এক-কেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে’ বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। ‘গণ-ভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে।

জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বলেন খালেদা।

বিএনপি জণগণের হাতেই রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা ‘ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে’ বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল নির্বাচনের দিন বা ভোট দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না বিএনপি।”

‘রেইনবো নেশন’

খালেদা প্রতিশ্রুতি দেন, তার দল রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার- এ চার প্রতিষ্ঠানকে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ‘ন্যায়পাল’ পদ সৃষ্টি করবে।

“শরতের আকাশে সাতটি রঙের বিচিত্র প্রভা নিয়ে রঙধনু যেভাবে মনোরম সৌন্দর্যের বিচ্ছূরণ ঘটায়, আমরা চাই সকল মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রেইনবো নেশনে (রঙধনু-জাতিতে) পরিণত করবে।”

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তিনি ‘সুনীতি, সুশাসন এবং সু-সরকারের’ (থ্রিজি) সমন্বয় এবং ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে’ রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চান।

ধর্মীয়, আঞ্চলিক ও নৃ-গোষ্ঠীগত পরিচয় এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণি ও গোষ্ঠীর মানুষকে নিয়ে একটি সুসংহত জাতি গঠনের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যৎমুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চায় বিএনপি। এজন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে।”

অর্থনীতির রূপকল্প

সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও খালেদার ভাষায়, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ‘তীব্র থেকে তীব্রতর’ হচ্ছে।

“আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এ সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৫০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর জন্য বার্ষিক  প্রবৃদ্ধির হার ডবল ডিজিটে উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”

এ লক্ষ্যে শিল্পখাতের উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাতের দুর্নীতি রোধ করে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করে তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করার পরিকল্পনার কথা বলেন বিএনপিনেত্রী।

রূপপুর বাতিল?

আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে আসছে, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো উদ্যোগে না নেওয়ার কারণে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে। আর বিএনপিনেত্রী বলছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত জাতীয় জ্বালানি নীতি তিনি গ্রহণ করতে চান।

তবে পাবনার রূপপুরে ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের যে কাজ বর্তমান সরকার শুরু করেছে, তা ‘পুনঃপরীক্ষা’ করার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলছেন, ক্ষমতায় যেতে পারলে, ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের আন্তঃদেশীয় গ্যাস পাইপ লাইনে বাংলাদেশকে সংযুক্ত করার উদ্যোগে নেবেন তিনি।

জঙ্গিবাদ দমন

বিএনপির সময়েই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে এলেও খালেদা জিয়া দাবি করেন, তার দল দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদ সকল রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ।

তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ওই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড বরদাশত করবে না এবং জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির মাধ্যমে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করা হবে।

“জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকৌশল হিসাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতির মূল্যবোধ শক্তিশালী করা এবং আন্তঃধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে।”

‘দুর্নীতির সঙ্গে আপস নয়’

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে; খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলার বিচারও চলছে। তবে খালেদা বলছেন, আগামীতে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস করবে না।

“সমাজের সর্বস্তরে দুষ্টক্ষতের  মত ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির রাশ টেনে ধরার জন্য পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।”

আইনি সংস্কার

খালেদা জিয়া বলেন, দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেলে তার দল বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে। 

বিশেষ ক্ষমতা আইন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাসহ ‘সকল কালা কানুন’ বাতিল এবং বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতনের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

সামাজিক সুরক্ষা পরিকল্পনা

খালেদা বলেন, তিনি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ, মূল্যস্ফীতির নিরিখে বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা চালু এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ ঘোষণা করতে চান।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের ‘একটি সঠিক তালিকা’ প্রণয়ন করার কথাও খালেদা বলেন, যিনি শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের জন্য গতবছর সমালোচিত হয়েছিলেন।  

এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করতে শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫% অর্থ ব্যয়; জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পর্যায়ক্রমে শূন্য শতাংশে কমিয়ে আনা; প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিখাতের বিকাশ নিশ্চিত করা; পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য বীমা চালু, প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একজন চিকিৎসকের ব্যবস্থা, দরিদ্রদের ৫০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

‘রূপকল্প ২০২১’ বনাম ‘ভিশন ২০৩০’

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি ২০২১ সালের মধ্যে দিন বদলের ইশতেহার ‘রূপকল্প ২০২১’ দিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। 

অন্যদিকে ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দুই দফায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে গিয়েও সাফল্য পায়নি খালেদার দল। দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এখন সংসদের বাইরে।

স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে পরাজয়ের দায় সরকারকে দিয়ে এলেও বিভিন্ন সময়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে আক্ষেপ শোনা গেছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথায়।      

এই প্রেক্ষাপটে গতবছর ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ‘ভিশন ২০৩০’ এর রূপরেখা তুলে ধরেন ১৯৯১-১৯৯৬ ও ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়া। সংবাদ সম্মেলনে তারই পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরা হল বলে জানান তিনি।

এই রূপকল্প বাংলায় ৩৭ পৃষ্ঠা এবং ইংরেজিতে ৪৪ পৃষ্ঠার পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করে অতিথি ও সংবাদকর্মীদের দেওয়া হয়। তবে পরিকল্পনা সাজাতে কেন ২০৩০ সালকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো ব্যাখ্যা সেখানে পাওয়া যায়নি।

এ ব্ক্তৃতায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণের প্রচলিত ধারা থেকে দূরেই থেকেছেন খালেদা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ঘিরেই তার বক্তব্য আবর্তিত হয়েছে, যদিও অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখা পাওয়া যায়নি।

খালেদা জিয়া বলেন, “আমরা যে ভিশন উপস্থাপন করলাম, তা অর্জন কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছি। এই দেশটাকে উন্নত ও মর্যাদাবান দেশে পরিণত করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব।”

তবে খালেদার রূপকল্পের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘মেধাস্বত্ব চুরির’ অভিযোগ এনে বলেছেন, তাদের দেওয়া ‘ভিশন ২০২১’ এর অনুকরণেই বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার এই রূপকল্পকে ‘ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাপানো রঙিন বেলুন’ আখ্যয়িত করে ধানমণ্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, “এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। এটা জাতির সাথে একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

অতিথিরা

বিকাল সাড়ে ৪টায় গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনের বলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন শুরুর কথা থাকলেও তা শুরু হয় ২৫ মিনিট দেরিতে।

‘ট্রেডমার্ক’ গোলাপী শাড়ি পরিহিত খালেদা যখন বলরুমে ঢোকেন, বেশ কিছু কর্মী সে সময় হুড়োহুড়ি করে বলরুমে ঢোকার চেষ্টা করেন। হোটেলের নিচেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ভিড় করে ছিলেন।

এ সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যম সারির কূটনীতিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা সেখানে ছিলেন না। জামায়াতে ইসলামীর কোনো নেতাকেও সেখানে দেখা যায়নি।

বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক নুরুল আমিন, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সাংবাদিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, সোহরাব হাসান, জ ই মামুন, আনিস আলমগীর, সৈয়দ আবদাল আহমেদ এবং কলামনিস্ট মাহফুজউল্লাহও এসেছিলেন। 

বিএনপি নেতাদের মধ্যে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর  নাসির উদ্দিন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, রুহুল আলম চৌধুরী, ইনাম আহেমেদ চৌধুরী, আমীনুল হক, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, হারুনার রশীদ, রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। তবে স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে মঈন খানকে সংবাদ সম্মেলনে দেখা যায়নি। 

অন্যদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হাবিব, মুশফিকুর রহমান, আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুল কাইয়ুম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, অধ্যাপক সাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, আবদুর রেজ্জাক খান, এজে মোহাম্মদ আলী, মনিরুল হক চৌধুরী, খন্দকার গোলাম আকবর, আসাদুজ্জামান রিপন, শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মারুফ কামাল খান, শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন আহমেদ দিদার উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার, এম এ রকীব, সৈয়দ মজিবুর রহমান, শফিউল আলম প্রধান, রেদোয়ান আহমেদ,ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জেবেল রহমান গনি, আজহারুল ইসলাম, আবু তাহের চৌধুরী,  সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাঈদ আহমেদ, মুফতি মো. ওয়াক্কাস, সাইফুদ্দিন মনি।