হাওরে ত্রাণ বাড়ানোর দাবি সিপিবি-বাসদের

অকাল বন্যায় পীড়িত হাওরবাসীকে সরকার যে ত্রাণ দিচ্ছে, তা অপ্রতুল দাবি করেছে সিপিবি-বাসদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2017, 07:36 PM
Updated : 7 May 2017, 07:36 PM

বাম দল দুটির ‘একটি দল’ গত ২ ও ৩ মে সুনামগঞ্জের কয়েকটি হাওর এলাকা ঘুরে এসে রোববার রাজধানীর পল্টনে সিপিবি কার্যালয়ে এক সম্মেলন ত্রাণ বাড়ানোর দাবি জানায়।

উজানের ঢলে প্রতি বছর হাওরের ক্ষয়ক্ষতি ৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে থাকলেও এবার বোরো ধানের ৯০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পরিদর্শন দলের প্রধান বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “ওই সময়টা আমরা হাওরবাসীর মধ্যে ছিলাম। প্রত্যক্ষ করেছি তাদের ক্ষতির ভয়াবহতা।”

হাওরে ২৪ লাখ পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকার ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

খালেকুজ্জামান বলেন, “একজন হাওরবাসী ১০০ টাকা ট্রলার ভাড়া দিয়ে সারাদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ৫ কেজি চাল ৭৫ টাকা দিয়ে সংগ্রহ করছে। এটা বানভাসি মানুষের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা নিয়ে নির্মম রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হাওর এলাকাকে অবিলম্বে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, প্রতি বছরই হাওরে নানা ধরনের বিপর্যয় হয়, কিন্তু এবারের বিপর্যয় অন্যান্যবারের তুলনায় ভয়াবহ। কারণ উত্তর পশ্চিম-পশ্চিম অঞ্চলের ছয়টি জেলার ৬২টি উপজেলার ৫৪১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫১৮টিই প্লাবিত হয়।

তিনি বলেন, হাওরে তলিয়ে গেছে মোট ২ লাখ ১৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির বোরো ধান। ২৪ লাখ পরিবারসহ প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগে বেশি উচ্চতার পানির মধ্যেও ভেসে থাকার মতো ধান চাষ হত জানিয়ে এক সময়ের ক্ষেতমজুর নেতা সেলিম বলেন, “প্রশাসন অধিক ফলনের আশায় নতুন ধরনের ধান আবাদে উৎসাহিত করছে, যা উচ্চতায় ছোট।

“এখনকার দুর্যোগ যেমন প্রাকৃতিক, কিন্তু তার সাথে যখন মনুষ্যসৃষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতি এবং অপরিকল্পিত বাঁধ দেয়া, সময়মত বাঁধ নির্মাণ না করে লুটপাট এই দুর্যোগকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে।”

প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে হাওরের রবার বাঁধ নির্মাণ, ডুবো রাস্তা নির্মাণ না করে উঁচু রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

সিপিবি-বাসদ জোটের অন্যান্য দাবিগুলো হল-আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে চাল, ডাল, আটাসহ আটটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দুর্নীতিমুক্তভাবে সরবরাহ এবং ত্রাণের চাল ও টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি; ইজারা বাতিল করে হাওরের সাধারণের জন্য জলমহাল উন্মুক্ত করা; সরকারি, এনজিও, মহাজনী ঋণ মওকুফ; সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দেওয়া।

বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি’র দায়িত্বপ্রাপ্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান দল দুটির নেতারা।

হাওর এলাকায় এসএসসি উত্তীর্ণদের বিনামূল্যে কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ-আল কাফি রতন, বাসদ নেতা নিখিল দাসও ছিলেন।