ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার হাওরাঞ্চলকে ‘দুর্গত’ বলছে না: বিএনপি

বন্যাপ্লাবিত বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলকে ‘দুর্গত’ ঘোষণা করলে বিশ্ববাসীর চোখে সরকারের ব্যর্থতা ধরা পড়ার শংকা থেকেই তা করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2017, 10:13 AM
Updated : 29 April 2017, 12:59 PM

শনিবার সকালে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এই মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নন, তারপরও বলছি, হাওর অঞ্চলে কী অবস্থা, কী বিপর্য্য় আপনি সেখানে যান, স্বচক্ষে দেখুন। ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য আপনি হয়ত দেশবাসী ও বিশ্ববাসীর কাছে আড়াল করতে চান বলেই দুর্গত এলাকা ঘোষণা করছেন না।”

দুর্গত এলাকা ঘোষণা না করায় সর্ব সাধারণ ত্রাণ তৎপরতায় নামতে পারছে না বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।

“সারা বিশ্ব এগিয়ে আসবে যদি দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করেন। দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করা হলেই সরকার খুবই খারাপ হয়ে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ মহানগর শাখার উদ্যোগে ‌‌‘হাওড়ের মহাবিপর্যয়কে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা এবং হাওরবাসীকে রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণের’ দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচি হয়।

অসময়ের ব্যাপক বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে ওই অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি আসছে।

দুদু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর লোকজন বলেছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া সেখানে (হাওর অঞ্চল) যাননি। ওই বিপর্যয়ের পর বিএনপির নেতা ও ২০ দলের নেতা দেশনেত্রীর নির্দেশে সেখানে গিয়েছিলেন। এই দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি বিএনপি মহাসচিবই করেছিলেন।

“তার আগে সেখানে কোনো সরকারি দল, ১৪ দলের নেতারা কেউ যাননি। কোনো রকম বক্তব্য দেননি। আজকে যে কথা বলেছেন আমাদের নেত্রীর সম্পর্কে, এটা আপত্তিকর। এই বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য আমি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

মহানগর ন্যাপের সভাপতি শহীদুন্নবী ডাবলুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ও কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শাহিদুর রহমান তামান্না বক্তব্য রাখেন।

ত্রাণে দলীয়করণের চেষ্টা

দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরাঞ্চলের অসহায় মানুষদের ত্রাণ নিয়ে সরকার দলীয়করণ করছে।

“উপদ্রুত হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদেরকে। তারা বেছে তালিকা করবে, আওয়ামী ঘরানার পছন্দের লোকদেরকে দিয়ে তালিকা করবে। আর লক্ষ লক্ষ লোককে ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত করবে- এই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্য।”

নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি দুর্গত এলাকায় ফটোসেশন করতে গেছেন। তার বক্তব্যটি সম্পূর্ণভাবে সত্যের অপলাপ মাত্র।”

বাধা পাওয়ার পরও বিএনপি নেতারা ত্রাণ কাজ চালাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “বর্তমান আওয়ামী দুঃশাসনে কসমেটিকস উন্নয়নের ফটোসেশন দেখতে দেখতে জনগণ এখন ক্লান্ত হয়ে গেছে।”

সড়কপথে চাঁদপুরের মতলবে নিজের গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালীর ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি তুলেন রিজভী।

মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য বিএনপি বার বার আবেদন করলে পুলিশ গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন এই বিএনপি নেতা।

“গণতন্ত্রের উৎকৃষ্ট নমুনা হচ্ছে- পুলিশের অনুমতির উপরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্ভর করছে। এই গণতন্ত্র বিশ্বে বিরল, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুলিশি গণতন্ত্র। দানবীয় সরকার বলেই মে দিবসে আমাদের কর্মসূচি করতে বাধা দিচ্ছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল আলম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আজিজুল বারী হেলাল, নুরী আরা সাফা, কাজী আবুল বাশার, মুনির হোসেন, অনিন্দ ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু ও মোরতাজুল করীম বাদরু উপস্থিত ছিলেন।