হাসিনার দিল্লি সফরে ফের ৫ বছরের শঙ্কায় খালেদা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সম্পাদিত চুক্তির সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেছেন, আরেক মেয়াদে পাঁচ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার জন্য এই চুক্তি করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2017, 06:54 PM
Updated : 10 April 2017, 05:04 AM

আর ওই পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দেশটাকে ভারতের কাছে ‘কাগজে-কলমে লিখে দেওয়া হতে পারে’ বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

রোববার রাতে গুলশান কার্যালয়ে আইনজীবীদের নিয়ে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “দেশে বর্তমানে সরকার যাদের বলা হয়, তারা আসলে জনগণের সরকার নয়, তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়। ভবিষ্যতেও তারা একই পরিকল্পনা করছে কীভাবে আবার ক্ষমতায় আসবে।

“আজকে দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য পাঁচ বছরের জন্য এটা একটা চুক্তি করেছে- পাঁচ বছর তাকে থাকতে দিতে হবে। এই চুক্তি তো তিনি সেজন্য করলেন।

“ওই পাঁচ বছর পরে উনারা বোধ হয় কাগজে-কলমে দেশটাকে লিখে দিয়ে মনে হয় বিদায় নেবে আর কি।”

কীভাবে আওয়ামী লীগ ফের পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে-প্রশ্নের জবাবে খালেদা বলেন, “কীভাবে তারা পাঁচ বছর থাকবে? ভোট হবে না। এই চুরি-চামারি করে, নানা রকম পুলিশকে দিয়ে, ছাত্রলীগ-গুণ্ডালীগ তাদের সবার হাতে হাতে তো অস্ত্র আছেই, তাদেরকে নিয়ে সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যারা আছে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে এই নির্বাচনে জেতে। তারা নির্বাচনে জেতে না, ওদেরকে জেতানো হয়- ওই নিয়ে তাদের সন্তুষ্টি।”

চার দিনের সফরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নয়া দিল্লি যান। শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে, যার বিরোধিতা করে আসছিল বিএনপি।

ওই চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এর মধ্য দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

শনিবার হায়দ্রাবাদ হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ভারত বাংলাদেশের জনগণকে ‘মর্যাদা না দিয়ে’ শুধু একটি রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ) রক্ষা করতে চায় অভিযোগ করেন রিজভী। এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফরের কথা বলেন তিনি। বিএনপির বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

আবারও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন বলে শঙ্কার কথাই বললেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, যিনি ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচন ঠেকাতে এবং তারপর সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। 

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও পুনর্নির্বাচিত সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনসহ বিজয়ী দল সমর্থক আইনজীবীরা রাত সাড়ে ৯টায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। অনুষ্ঠানের শুরুতে নবনির্বাচিত আইনজীবীরা বিএনপি চেয়ারপারসনের হাতে ফুলের তোড়া দেন।

গত ২২ ও ২৩ মার্চে অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল সভাপতি-সম্পাদকসহ আটটি পদে বিজয় অর্জন করে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ পেয়েছে সহ-সভাপতি, সহ-সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষসহ ছয়টি পদ।

ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও মাহবুবউদ্দিন খোকন বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এজে মোহাম্মদ আলী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, ঢাকা বারের মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খোরশেদ আলম, মহসিন মিয়া, বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।