নির্বাচন কমিশনেই বিএনপির চাওয়া শেষ নয়

সুষ্ঠু ভোটের জন‌্য ‘প্রত‌্যাশার’ নির্বাচন কমিশন গঠনের পর রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে উদ‌্যোগ চাইছে বিএনপি।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2017, 11:09 AM
Updated : 20 Jan 2017, 12:57 PM

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘জনগণ আস্থা রাখতে পারে’- এমন একটি সার্চ কমিটির প্রত‌্যাশা জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস‌্য মওদুদ আহমদ বলছেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন দলীয় সরকার থাকলে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না।

এজন‌্য নির্বাচনের সময় ‘সহায়ক সরকার’ চায় বিএনপি। এই সরকার কেমন হবে তার ব‌্যাখ‌্যায় শুক্রবার এক আলোচনা সভায় মওদুদ বলেন, “এমন একটি সরকার থাকতে হবে যে সরকারের নির্বাচনের ফলাফলে কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারবে না। সহায়ক সরকার বলতে আমরা এটাকেই বুঝি।”

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেভাবে সংলাপ করেছেন, সেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও সংলাপ করবেন বলে আশা তার।

তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপতি যে উদ্যোগ (নির্বাচন কমিশন) নিয়েছেন এই উদ্যোগ সফল হবে বলে আমরা আশা করি। এরপর আমরা আশা করব, তিনি আরও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন যাতে করে আগামী নির্বাচন কী করে আমরা নিরপেক্ষ-সুষ্ঠু-অবাধ করতে পারি।

“এমন একটি সহায়ক সরকার তৈরি করতে পারি, যাতে করে দেশের মানুষ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে। আমি আহ্বান জানাব রাষ্ট্রপতিকে, তিনি এরপরে এই সংলাপের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবেন। আমরা আরও সংলাপে যেতে চাই, যাতে করে দেশে এমন একটি সরকার হয়, যে সরকারের অধীনে ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।”

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আপত্তির কারণ ব‌্যাখ‌্যায় এই বিএনপি নেতা বলেন, “দলীয় সরকারের অধীনে প্রশাসন থাকে। যতই বলেন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে, তার অধীনে এই মন্ত্রণালয় থাকবে, তাতে কোনো কাজ হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী থেকে যান, তার অধীনে সরকার থেকে যায়। প্রশাসন বুঝবে- কার অধীনে নির্বাচনটা হচ্ছে, কারা নির্বাচনে জিতবে। এই অবস্থায় কখনোই ইসি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করলেও এখন ‘সহায়ক সরকার’র কথা বলছে বিএনপি।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে নির্ধারিত সময়ে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে।

সরকারের তিন বছর পূর্তিতে গত ১২ জানুয়ারি জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথা বলেন। রাষ্ট্রপতির সংলাপের মধ‌্য দিয়ে গঠিতব‌্য নির্বাচন কমিশনের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সব দলকে পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে বিএনপি নেতা মওদুদ বলছেন, এ বিষয়ে ফয়সালা না হলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প থাকবে না তাদের।

“দেশের মানুষের অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না আন্দোলন করা ছাড়া। সেই আন্দোলনের মধ্যেই তখন এই সমস্যার সমাধান আমাদের আনতে হবে। আমরা চাই না ততটুকু যেতে। আমরা মনে করি সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভবপর।”

নির্বাচন কমিশন নিয়ে দলের প্রত‌্যাশা তুলে ধরে মওদুদ আহমদ বলেন, “আমরা আশা করি, রাষ্ট্রপতি একটা ফলপ্রসূ সমাধান দেবেন, যাতে আমরা সকলেই সন্তুষ্ট হই। এমন একটা বাছাই কমিটি যেন হয়, তারপরে এমন একটা কমিশন যাতে হয়, যেখানে দেশের মানুষের আস্থা আসে।

“আমাদের যাতে মনে হয় যে, এই কমিশনের মাধ্যমে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।”

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইতোমধ‌্যে ৩১টি দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছেন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বেশিরভাগ দল সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে, তা না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটির পক্ষেই মত দিয়েছে অধিকাংশ দল।

বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ‌্য দিয়েই গত ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে এ সংলাপ শুরু হয়। সার্চ কমিটি গঠন ও ইসি নিয়োগের বিষয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয় দলটি।

সে প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা ফোরামের আলোচনা সভায় মওদুদ বলেন, “নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছি, সেই প্রস্তাবের সব কিছু মানতে হবে- এমন কিছু কথা নাই। এখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অনেক মতামত দিয়েছেন, তাদের সব মতামত নিয়ে একটা সমন্বিতভাবে নির্বাচন কমিশন পূর্নগঠন করার জন্য একটা কাঠামো আমাদের রাষ্ট্রপতি যদি তৈরি করে দিতে পারেন বা প্রস্তাব ও সুপারিশ করতে পারেন, তাহলে আমরা সাফল্যের সঙ্গে প্রথম পদক্ষেপ পেরিয়ে যেতে পারব।”

জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্বাধীনতা ফোরাম এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন, নির্বাহী কমিটির সদস্য খালেদা ইয়াসমীন, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা বক্তব্য দেন।