সরকার নয় জনগণের পাশে থাকবে ভারত, আশা বিএনপির

জঙ্গি দমনে সরকারের সাঁড়াশি অভিযানের পক্ষে ভারতের সমর্থন দেওয়ার খবরে উদ্বেগ দেখিয়ে বিএনপি বলেছে, প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের ‘অনির্বাচিত সরকারকে’ সমর্থন না দিয়ে ‘গণতন্ত্রকামী জনগণের’ পক্ষে থাকবে বলে তাদের আশা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2016, 11:14 AM
Updated : 20 June 2016, 01:55 PM

সোমবার দুপুরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় উঠেছে- আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের সরকার সঠিক কাজটি করছে, তারা জঙ্গি দমনে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে।

“ভারত আমাদের বন্ধু; নিঃসন্দেহে শুধু বাংলাদেশের প্রতিবেশী নয়, অকৃত্রিম বন্ধুও। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় যেটা প্রত্যাশা করি, সেটা হচ্ছে- ভারতবর্ষ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের সঙ্গেই থাকবে। নিশ্চয়ই এমন কোনো শক্তি বা সরকারকে প্রশ্রয় দেবে না বা সহযোগিতা করবে না, যারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর চড়াও হয়ে এসেছে।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ আখ্যা দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “স্বাভাবিকভাবে এদেশের জনগণের প্রত্যাশা সকল গণতান্ত্রিক দেশ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই-সংগ্রাম করছে তাদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

গত ১০ জুন থেকে চলা সপ্তাহব্যাপী ‘সাঁড়াশি অভিযানে’ পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রথম চার দিনে প্রায় ১২ হাজার সন্দেহভাজন অপরাধী ও সাত দিনে ১৭৯ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে।

বিএনপির অভিযোগ, জঙ্গি দমনের নামে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিএনপির প্রায় তিন হাজারের মতো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, “জঙ্গি দমনের নামে সারা দেশে এক সপ্তাহে অভিযানে ১৩/১৪ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ‍পুলিশ এখন বলছে, এখানে চিহ্নিত সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৭৯ জন। তাহলে বাকিরা কারা? বাকিদের তাহলে কেন ধরলেন?

“আসলে এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তারা (সরকার) বাংলাদেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে চেয়েছে। যখন তারা (সরকার) সম্পূর্ণরূপে গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের উত্থান বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন তারা এই অভিযানের নাম করে শক্ত হাতে আমাদের দমন করছে। বাংলাদেশর মানুষকে প্রতিপক্ষ ঘোষণা করে দেশের মানুষের ওপরেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে।”

‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে সরকার কোনোমতেই টিকে থাকতে পারবে না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সেজন্য তারা জঙ্গিবাদের নাম করে, গুপ্তহত্যার নাম করে, আসল অপরাধীদের খুঁজে বের না করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে।

এই অবস্থায় থেকে উত্তরণে ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।

“এই রোজার দিনে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে বন্দি হয়ে আছেন। তাদের মুক্তির জন্য আমাদের আন্দোলন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের প্রতি সমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।”

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মহানগর নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কাজী আবুল বাশার, বজলুল বাসিত আনজু, ইউনুস মৃধা, উলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, যুব দলের আবদুল খালেক, জামিলুর রহমান নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের লিটন মাহমুদ ও মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ বক্তব্য রাখেন।