জঙ্গি দমনে সারাদেশে ‘সাঁড়াশি অভিযানে’র নামে সরকারবিরোধীদের দমন শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 10 Jun 2016, 09:23 PM
পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে তিনদিনে নয়জন নিহতের ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে এর সমালোচনা করেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিকভাবে মুক্তমনা লেখক, অধ্যাপক, ব্লগার, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতা ও ভিন্ন মতাবলম্বী মুসলিম খুনের প্রেক্ষাপটে জঙ্গি ধরতে শুক্রবার সারা দেশে বিশেষ অভিযানে নেমেছে পুলিশ।
এদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ মানুষ আটকের খবর এলেও বিএনপি নেতা ফখরুল বলেছেন, গত রাতে ছয়শজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মী।
বিকালে এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কিছু কিছু জায়গা থেকে আমরা খবর পেয়েছি, বিরোধী দলভুক্ত যারা আছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে আশঙ্কা করছি যে, গুপ্তহত্যার ছুতো ধরে আরেকটি অভিযান তারা পরিচালনা করছে; যারা বিরোধী দল, যারা ভিন্নমত পোষণ করে তাদের ওপর নির্যাতন নেমে আসছে, তাদের দমন করার আরেক প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে।”
সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসলামপন্থি উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করলেও বিএনপি নেতা ফখরুল দেখছেন ভিন্ন কিছু।
তিনি বলেন, “এই হত্যার শিকার হচ্ছে শুধু ব্লগাররাই নয়, শুধু সংখ্যালঘু যারা রয়েছেন তারাই নয়, এখানে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী বেশ কিছু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই গুপ্তহত্যার প্রবণতা যদি দেখি, তাহলে আমাদের কাছে মনে হবে, একদিকে যেমন ধর্মে বিশ্বাস করে না যারা তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে, অন্যদিকে আবার ধর্মে বিশ্বাস করেন, ইসলাম ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম বা খ্রিস্টান ধর্মে যারা বিশ্বাস করেন তারাও আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
“সুতরাং যারা বলতে চান, ইসলামী জঙ্গিরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন থাকছে তাহলে এই নিরীহ অসহায় মানুষগুলোকে কারা হত্যা করছে?”
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “যেসব ব্যক্তিকে ওই সব হত্যার জন্য অভিযুক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পরবর্তীকালে দেখা যায় কিছুদিনের মধ্যে তাদের বন্দুকযুদ্ধের কথা বলে হত্যা করা হয়েছে।
“গত তিনদিনে নয়জনকে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কোনো না কোনো এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল।”
বর্তমানে দেশে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষই নিরাপদ নয় দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “তারা কেউই শান্তিতে নেই। আজকে দেশের প্রতিটি মানুষ একটা আতঙ্ক ও উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।”
সরকার দেশে কোনো বিরোধী পক্ষ রাখতে চায় না বলে অভিযোগ করেন ফখরুল।
“গণতন্ত্রের কথা বলে গণতন্ত্রের একটা মুখোশ পরে তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা আবার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আজকে গোটা দেশের মানুষ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বে এ্রর সমালোচনা হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটা আবদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন ভিন্ন মতাবলম্বীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে আটকে রাখা হচ্ছে।”
শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান, শওকত মাহমুদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ দলের ‘বহু’ নেতাকর্মীকে আটকে রাখার সমালোচনা করেন তিনি।
সম্প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ‘গণতান্ত্রিক ক্ষেত্র সংকোচন ও বিরোধীদের মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের কথা উঠে এসেছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
একটি ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা এই সংকটের সমাধান চেয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
পুরানা পল্টনে সীগাল রেস্টুরেন্টে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক খেলাফত মজলিশ এই ইফতারের আয়োজন করে।
ইফতারে জোট নেতাদের মধ্যে খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা জুবাযের আহমেদ, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তজা, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি আবদুল রব ইউসুফী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মাওলানা এটিএম হেমায়েতউদ্দিন, এআরএম আবদুল মতিন, সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিন, মোস্তফা কামাল মজুমদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।