ধানের শীষের আড়াই গুণ বেশি ভোট নৌকার

অনিয়ম-সহিংসতার মধ্যে দেশের নির্বাচন উপযোগী চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে প্রায় দুই হাজারের ভোট শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2016, 06:57 PM
Updated : 24 April 2016, 06:58 PM

প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে দলভিত্তিক এই ইউপি নির্বাচনে দেড় ডজন দল অংশ নিলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। প্রথম তিন ধাপের ভোটের পর দেশের অর্ধেক এলাকার ফলও ঘোষণা হয়েছে।

এতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের ভোটের হিসাব ও বিজয়ী চেয়ারম্যান পদের ফল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ১ কোটি ১৬ লাখের বেশি। ধানের শীষ প্রতীকে পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪৪ লাখ। এ হিসাবে বিএনপির আড়াই গুণের বেশি ভোট পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিজয়ী প্রার্থীর হিসাবে বিএনপির তুলনায় আট গুণ জিতেছে আওয়ামী লীগ।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে তিন ধাপে এ পর্যন্ত নৌকা প্রতীকে জয়ী হয়েছেন ১ হাজার ৩৭৮ জন এবং ধানের শীষে ১৭২ জন।

দলের বাইরে ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ৩৫৮টি ইউপিতে।

গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ৭১২ ইউপির, ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৬ ইউপির ও ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ৬১৪ ইউপির ভোট হয়েছে। সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় তৃতীয় ধাপের দুইটি ইউপিতে ভোট হয়নি।

দেশের সাড়ে চার হাজার ইউপির মধ্যে ছয় ধাপে ৪ হাজার ২৭৫ ইউপির ভোট হওয়ার কথা এবার। চতুর্থ ধাপে ৭৪৩ ইউপিতে আগামী ৭ মে, পঞ্চম ধাপে ৭৩৩ ইউপিতে ২৮ মে এবং শেষ ধাপে ৪ জুন ছয় শতাধিক ইউপির ভোট হওয়ার কথা।

ইসি জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৭৪ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে ৭৮ শতাংশ ও তৃতীয় ধাপে ৭৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।

প্রথম ধাপের ভোটের চিত্র। সূত্র নির্বাচন কমিশন

তিন ধাপের ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, প্রথম দুই ধাপের তুলনায় শনিবার তৃতীয় ধাপের ভোটে অনিয়ম-সহিংসতা কম হয়েছে। তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। পরব্তী ধাপগুলোয় অনিয়ম-সহিংসতা শূন্যের কোটায় আনতে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ইতোমধ্যে নেওয়া ‘কঠোর পদক্ষেপের’ পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ‘লব্ধ অভিজ্ঞতা’ কাজে লাগিয়ে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তিন ধাপে আ. লীগ-বিএনপি

ইসির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রথম ধাপের চূড়ান্ত ফলে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান হয়েছেন ৪৯৪ ও বিএনপির ৫০ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন ১০৯ ইউপিতে। আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৪ জন।

দ্বিতীয় ধাপের ভোটের চিত্র। সূত্র নির্বাচন কমিশন

দ্বিতীয় ধাপে নৌকা প্রতীকের ৪১৯ জন ও ধানের শীষের ৬৩ জন বিজয়ী হয়েছেন। ১১৭ ইউপিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ৩৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

রোববার পর্যন্ত তৃতীয় ধাপের পাওয়া ৫৫৪টির ফলে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের ৩৪৮ জন ও বিএনপির ৫৯ জন জয়ী হয়েছেন। ১৩২ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন। এ ধাপে আওয়ামী লীগের ২৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, তিন ধাপের ১ হাজার ৯৬৫ ইউপির মধ্যে ১ হাজার ৮২৭টির চূড়ান্ত ফল কমিশনে এসেছে। এর বাইরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ১১৭ জন এবং নানা জটিলতায় বাকি ইউপির ফল স্থগিত রয়েছে।

চূড়ান্ত ফলে এ পর্যন্ত নৌকা প্রতীকের ১ হাজার ৩৭৮ জন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীসহ) ও বিএনপির ১৭২ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন। ৩৫৮ ইউপিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। জয় পেয়েছেন জাতীয় পার্টি, জেপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও।

ভোটে ধানের শীষের দ্বিগুণের বেশি নৌকা

তিন ধাপে নৌকা প্রতীকের ভোট ১ কোটি ১৬ লাখের বেশি; ধানের শীষ পেয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজারেরও বেশি।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এলাকা ছাড়া ব্যালটে ভোট হওয়া ইউপিগুলোর মধ্যে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৪৩ লাখ ২৫ হাজার ৬২০ ভোট পেয়েছেন; বিএনপি প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫৩১ ভোট। এ ধাপে নৌকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী ৫৪ ইউপি বাদে আরও ৬৫ ইউপিতে প্রার্থীই ছিল না বিএনপির।

দ্বিতীয় পর্বে নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৭৭টি ও ধানের শীষে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৩টি। এ ধাপে আওয়ামী লীগের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী ৩৪ ইউপি বাদে আরও ৪৫ ইউপিতে প্রার্থী ছিল না বিএনপির।

তৃতীয় ধাপের ভোটের চিত্র। সূত্র নির্বাচন কমিশন

তৃতীয় ধাপে নৌকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী ২৯ ইউপির বাইরে আরও ৫৭ ইউপিতে প্রার্থী ছিল না ধানের শীষের। এ ধাপে নৌকার ভোট ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯০২টি ও ধানের শীষের ১৫ লাখ ১৫ হাজার ৩টি। কিছু ইউপির চূড়ান্ত ফল বাকি রয়েছে তৃতীয় ধাপের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু বললেও বিএনপি বলছে, নির্বাচনের নামে প্রহসন চলছে।