পৌর নির্বাচনের প্রচারণায় সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ‘সুবিধা’ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
Published : 11 Nov 2015, 07:29 PM
আচরণবিধিতে মন্ত্রী-এমপিসহ সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের নির্বাচনী এলাকায় সফর ও প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রেখে বিধিমালা সংশোধন প্রক্রিয়ায় ভেটিং দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে সরকারি সুবিধাভোগীদের সুবিধা দিতে চেয়েছে ইসি। তবে মন্ত্রণালয় বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের অন্য আইনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এ সুবিধা দিতে চাইছে না।”
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিধিমালা সংশোধনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। চূড়ান্ত হলেই তা জানানো হবে।”
বৃহস্পতিবারের মধ্যে ভেটিং সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন তিনি।
ভেটিংয়ে সম্ভাব্য পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু জানাতে নারাজ মন্ত্রী বলেন, ইসিতে পাঠানো হলে তা নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষই জানাবে।
নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলতে চায় না।
নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভেটিংয়ে আমাদের প্রস্তাবে কী সংশোধনী আসছে তা জানি না। কপির অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।”
দলীয় ভিত্তিতে পৌরসভা নির্বাচন করতে আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির পর স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনের বিধিমালা তৈরি করে তা গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠায় ইসি।
প্রস্তাবিত আচরণবিধিতে মন্ত্রী ও সমমর্যাদার ব্যক্তি, এমপি ও মেয়রদের নির্বাচনপূর্ব সময়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রেখেছে। তবে প্রচারণাকালে সরকারি সুবিধায় যানবাহন ও অন্য প্রচারযন্ত্র ব্যবহার না করার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থানীয় নির্বাচনে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারে যেতে সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাবে কঠোর সমালোচনায় পড়তে হয়েছে ইসিকে।
মঙ্গলবার বিধিমালা সংশোধন নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন।
বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এখন কিছু বলতে চাই না। ভেটিং হয়ে এলে জানাব।”
ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইন মন্ত্রণালয় ভেটিংয়ে পরিবর্তন আনতে পারে।”
বিষয়টি নিয়ে বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বসেছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী।
নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের অনুপস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও তা নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি জাবেদ আলী।
‘দ্বন্দ্ব’ ইসিতেও
পৌর নির্বাচনের আচরণবিধির সংশোধনী নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে বলে ইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
‘সবার জন্য সমান’ সুযোগ তৈরিতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ না দেওয়ার জন্য খসড়া তৈরি করে রেখেছিল ইসি।
গত সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান, সুবিধা ছেড়ে সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। এমন প্রস্তাবই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
হঠাৎ করে একজন নির্বাচন কমিশনার এ অবস্থান নিলে বিপাকে পড়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা।
আচরণবিধি নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানিয়ে দেন চার নির্বাচন কমিশনারের আরেকজন।
নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনার ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার, রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিরা ইসির উদ্যোগের সমালোচনা করে এ প্রস্তাবকে ‘অন্যায় আচরণবিধি’ বলে মত দেন।
আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের পরিকল্পনা ইসির।
ইসি সচিব সিরাজুল বলেন, “বিধিমালা জারি হলে ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা নিয়ে কমিশন বৈঠকে বসবে।”