জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সাপের সঙ্গে তুলনা করে এই পরামর্শ দেন।
খালেদা বলেন, “একুশ শতকে আপনাদের চিন্তাধারার পরিবর্তন করুন। কীভাবে আজ আপনাদের সম্পদ, মা-বোনসহ সকলের নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সাপের থেকে কোনো অংশে কম নয়।
“আমি বলব, সাপ দংশন করলে ওঝা হয়ে ঝাড়তে যাবেন না। তারা (সাপ) যাতে দংশন করতে না পারে, সেজন্য আপনারা সর্তক থেকে সেভাবে কাজ করবেন।”
বিএনপিকে অসাম্প্রদায়িক দল দাবি করে খালেদা বলেন, “আমরা মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলে বাংলাদেশি। আমরা সকল ধর্মের সমান অধিকারে বিশ্বাস করি। সংখ্যালঘু আমরা ব্যবহার করি না।’’
দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারনী ফোরামের গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে অন্তর্ভুক্তির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা যদি তাকে বিশ্বাস না করতাম, তাহলে পার্টির সর্বোচ্চ ফোরামে রাখতাম না।”
“কাজেই আমরা এটা বলে দিতে চাই, আপনাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) মাঝ থেকে এই বিষয়টা আসতে হবে। এটা শুধু একপক্ষে হতে পারে না। আমরা করব, কিন্তু অন্য সাইড থেকে সমর্থন বা সাড়া পাব না। তাহলে জিনিসটা এগোবে না। দুই-পক্ষ থেকে এগোতে হবে,” হিন্দুদের উদ্দেশে বলেন খালেদা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী কৃষ্ণ সেবানন্দ মহারাজ, স্বামী দিব্যযোগান্দ মহারাজ, ইসকন বাংলাদেশের মাধব মরারী দাশ ব্রহ্মচারী, তরুন শ্যাম দাশ ব্রহ্মচারী, শুভ নিতাই গৌর দাশ ব্রহ্মচারী, সিতাপতি গোঁরমাই, ধানমণ্ডি পূজা মণ্ডপের দিলীপ চৌধুরী, বনানী পূজা মণ্ডপের পান্না লাল দত্ত নানাজনের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল ও তাদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করেন বিএনপি চেয়ারপারসন, যিনি ২০০১ সালে সরকার গঠনের পর সারাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছিল।
খালেদা বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়, বিপদে পড়ে। স্বাধীনতার পর থেকে হিন্দুদের সম্পত্তি কারা দখল করেছে? হাসিনার আত্মীয়-স্বজনরা দখল করেছে।”
এই প্রসঙ্গে বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের একটি ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “৯১-৯২ সালের কথা। গণতন্ত্রী পার্টির সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত যিনি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জানেন, তাকে একটি আলোচনা সভায় দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। তিনি জিয়াউর রহমানকে যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে দেখেছেন, তা বলেছিলেন।
“জিয়াউর রহমান সম্পর্কে ভালো ভালো কথা সে বলল কেন, সেজন্য তার বাড়ি আক্রমণ করেনি? আগুন দেয়নি? আওয়ামী লীগ হচ্ছে এরকম জিনিস।”
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
তিনি বলেন, “সরকারের পায়ের নিচে কোনো মাটি নেই। যত জরিপই চালাক, যদি তাই হত নির্বাচন দিতে ভয় কেন? নির্বাচনটা দিয়ে দিক। প্রমাণ হয়ে যাবে মানুষ কাকে চায়, কাকে চায় না।”
অনুষ্ঠান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, হিন্দু-বৌদ্ধ-ক্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা সুশীল বড়ুয়া, অমলেন্দু দাস অপু, নুকুল সাহা, রমেশ দত্ত, তরুন দে, মিল্টন বৈদ্য, রতন বালা, মৃনাল বৈষ্ণবও বক্তব্য রাখেন।