“কে আবার! আমার কোনও ফ্যাশন ডিজাইনার নেই। তবে হ্যাঁ, কিছু লোক দাবি করেন ঠিকই। আমি গায়ে মাখি না। ক’জনকে বলব, আর কী-ই বা বলব!’
শুক্রবার নয়া দিল্লির মানেকশ অডিটোরিয়ামে স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার সময় নিজের ফ্যাশন-দুরস্তের রহস্য মোদী এভাবেই ফাঁস করেন বলে ভারতের সংবাদ মাধ্যমের খবর।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মোদীর সঙ্গে ভারতের নয়টি রাজ্যের স্কুলশিক্ষার্থীরা কথা বলার সুযোগ পেয়েছিল।
গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া মোদী স্কুলছাত্রদের ‘মোদী-কুর্তা’ নামে আলোচিত তার পোশাকের জন্মকাহিনীও শুনিয়েছেন।
“তখন আমি আরএসএসের প্রচারক মাত্র। সম্বল বলতে কয়েকটি ফুল হাতা কুর্তা আর বই। ছোট্ট একটা ব্যাগে সে সব গুছিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। নিজের জামাকাপড় নিজেই কাচতাম। একদিন হঠাৎ মনে হল, গুজরাটে এমনিই শীত বিশেষ পড়ে না। তাছাড়া, ফুল হাতা কুর্তা ব্যাগে জায়গাও বেশি নেয়। সেগুলোর হাতা কেটে ‘হাফ স্লিভ’ করে নিলে কেমন হয়? যেমন ভাবা তেমন কাজ! সেই থেকে বেশির ভাগ সময় হাফ হাতা কুর্তা পরে বেড়াই আমি।”
এর আগে আহমেদাবাদের ‘জেড ব্লু’ ফ্যাশন স্টোরের মালিক বিপিন চৌহান মোদীর ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে দাবি করে আসছিল। জেড ব্লু’র ওয়েবসাইটে ফলাও করে লেখাও রয়েছে- ‘আমরাই মোদী-কোটের জনক’।
স্কুলছাত্রদের সঙ্গে মোদীর আড্ডার পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিপিন চৌহানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও বিপিন কিংবা জেড ব্লুর কেউই ফোন ধরেনি, এসএমএসের উত্তরও দেয়নি।
পোশাক-আশাকের জন্য অবশ্য বারবারই বিতর্কে জড়িয়েছেন মোদী। ওবামার ভারত সফরকালে মোদীর ‘পিন স্ট্রাইপ উলেন স্যুট’ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। গাঢ় নীল রঙের সেই স্যুটের সারা গায়ে পিন স্ট্রাইপে লেখা ছিল, ‘নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী’। স্যুটের দাম ছিল দশ লাখ ভারতীয় মুদ্রা!
এছাড়া ভারতের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার মাথায় পরা জয়পুরী সাফা পাগড়ি এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিনে পরা লাল পশমিনা শালও বেশ আলোড়ন তুলেছিল।
মোদীর এ ফ্যাশন পশ্চিমেও যে জনপ্রিয়, ভারতে গিয়ে সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও।
‘ফ্যাশনে মিশেল ওবামাকেও পেছনে ফেলে দিয়েছেন প্রাইম মিনিস্টার মোদী,’ বলেছিলেন ওবামা।
যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের উপদেষ্টা ও লেখক লান্স প্রাইস মোদীকে নিয়ে একটি বইও লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, মোদী বুলগেরির চশমা পরেন, মোভিডোর ঘড়ি পরেন। পকেটে গুঁজে রাখেন মঁ ব্লঁ পেন।
মোদীর ভাষ্য- “হ্যাঁ, আমি ভালো ভাল পোশাক পরি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করি। জামাকাপড়ের রঙ মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরার বোধ ভগবান উপহার দিয়েছেন। তাই নিজেই ঠিক করি কী পরব, কী পরব না। ভগবানের আশীর্বাদে সব কিছু আমাকে মানিয়েও যায়।”
প্রাইসকে মোদী এ-ও বলেছিলেন, “আমার কোনো ফ্যাশন ডিজাইনার নেই ঠিকই, কিন্তু সবাই যে বলেন আমি মানানসই পোশাক পরি সেটা শুনতে ভালই লাগে।”