ছোটো মেয়ে কুশি সিদ্দিকীর হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিবিজড়িত ছবি দেখছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। পেছনে স্ত্রী নাসরিন কাদের। একটি ছবিতে চোখ আটকে যেতেই বলে উঠলেন: “দেখেন আপনার ছবি।”
Published : 17 Aug 2015, 10:21 PM
“ওহ, তাই নাকি!”- বিস্ময় মেশানো কণ্ঠে সাড়া বঙ্গবীরের।
সেই ছবির সামনে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থেকে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন, পলকহীন দৃষ্টি ছবিতে।
১৯৭২ সালে তোলা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বীর উত্তম কাদের সিদ্দিকীর ছবি ছিল সেটি। যেদিন তার নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল।
ধানমণ্ডি-৩২ এ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের বর্ধিত ভবনের চতুর্থ তলার গ্যালারিতে ছবিটি স্থান পেয়েছে।
এভাবে স্মৃতিময় নানা ঘটনার ছবি দেখে এবং পরিবারের সদস্যদের দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে সময় কাটান পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সশস্ত্র প্রতিরোধে নামা কাদের সিদ্দিকী।
তবে তাতে তিনি সফল না হয়ে পাড়ি জমান ভারতে। এরপর ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফেরেন।
ফেরার পর আওয়ামী লীগে যোগ দেন কাদের সিদ্দিকী। পরে দল থেকে বহিষ্কারের পর কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা এই রাজনীতিক তার আগের দলের কড়া সমালোচক।
কাদের সিদ্দিকীর বর্তমান অবস্থানের সমালোচনা তার ভাই আবদুল লতিফ সিদ্দিকী করেন এভাবে- ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার রাজাকার হওয়ার শখ জেগেছে’।
সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে আসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। জাদুঘরের দুইটি ভবনে ঘুরতে সময় নেন প্রায় ৩০ মিনিট।
জাদুঘর অফিসে ঢুঁ মেরে কাদের সিদ্দিকীর জাদুঘর পরিদর্শন কাজের সূচনা হয়। সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি।
পরে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র অক্ষত অবস্থায় রাখা মূল জাদুঘর ভবনে যান কাদের সিদ্দিকী। নিচতলার ড্রয়িং রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় স্ত্রীকে বলতে শোনা যায়: “এখানে কত সময় পার করেছি! এখন মনে হচ্ছে, এটা ছোট হয়ে এসেছে।”
বঙ্গবন্ধুর পড়ার কক্ষের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় এক কর্মচারীকে ডেকে দরজা বন্ধ থাকার কারণ জানতে চান কাদের সিদ্দিকী।
ওই কর্মচারী বলেন, “মানুষ ধরে নষ্ট করে ফেলে।” তাকেও প্রতিউত্তরে বলতে শোনা যায়: “ভাল কাজ হয়েছে।”
জাদুঘরের দ্বিতীয় তলার কর্মচারী অর্জুনুর রহমান কাদের সিদ্দিকীকে দেখে কুশল বিনিময়ে এগিয়ে যান: “স্যার, কেমন আছেন?”। বলতেই স্বভাবসুলভ উঁচু গলায় কাদের সিদ্দিকী জানতে চান, “কী রে, কী অবস্থা তোর।” পরে তাকে বুকে জড়িয়ে নেন।
সোমবার একাত্তরের ‘বাঘা কাদের’কে কাছে পেয়ে ছবি তোলার আবদার করতে দেখা যায় ছোট-বড় অনেক দর্শনার্থীকে। সানন্দে সবার আবদারও মেটান।
সবশেষে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে এবং ‘স্যুভেনির শপ’ থেকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা ১২টি বই কিনে ফিরে যান তিনি।
গত বছর ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার আমন্ত্রণে জাদুঘরে আসার কথা জানান মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো সময়ের স্মৃতিচারণ করতে বললে এক ধরনের ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ পায় তার কণ্ঠে। বলেন, “যাদের জীবন নিয়েই টানাটানি, তাদের আবার কীসের স্মৃতিচারণ!”
কাদের সিদ্দিকী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে আমাদের জীবনের অবসান হয়েছে। তার মৃত্যু মানে স্বাধীনতার মৃত্যু, আমাদের মর্যাদার মৃত্যু, বাংলাদেশের মুক্তির মৃত্যু।
“তিনি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতেন। এ কারণে তাকে মরতে হয়েছে। তিনি যদি আজকে যারা দেশে লুটপাট করে খাচ্ছে এবং লুটপাটকারীদের সঙ্গে আপস করছে তাদের মতো হতেন তাহলে তাকে মরতে হত না।”
বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বড় মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী, ছেলে দীপ সিদ্দিকী ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী।