রাজনীতিবিদরা খলনায়ক হয়, গণমাধ্যম নয়: ইনু

রাজনীতিবিদদের অনেক সময় খলনায়কের ভূমিকায় দেখা গেলেও গণমাধ্যম কখনোই খলনায়ক হয় না বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2016, 04:19 PM
Updated : 29 Nov 2016, 04:19 PM

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট ভবনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রথম জাতীয় সম্মলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে গণমাধ্যম কখনোই খলনায়ক হয় না। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা খলনায়ক এবং খলনায়িকা হয়। কিন্তু গণমাধ্যম কখনোই খলনায়কের ভূমিকায় অবর্তীণ হয় না।

“গণমাধ্যম সব সময়েই গণতন্ত্রের ও উন্নয়নের স্নেহময়ী মাতা হিসেবে গণতন্ত্র এবং আমাদেরকে শাসনও করবে, আদর করবে, প্রশংসা করবে।”

সবাইকে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে থাকার আহ্বান জানিয়ে জাসদ নেতা ইনু বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে থাকতে হবে, ধর্মনিপেক্ষতার নামে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হলে সেই বিভ্রান্তি মোকাবেলার করার দায়িত্ব এক নগণ্য রাজনৈতিক কর্মীর কেন হবে? এই বিভ্রান্তি মোকাবেলা করার দায়িত্ব তো আপনাদের (গণমাধ্যমের)।”

রাজনীতিবিদরা ভুল করলে শুধরে দেওয়া গণমাধ্যমের দায়িত্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র কখন তার পরিধির বাইরে পা রাখছে, আর কখন ব্যক্তি আইনের বাইরে পা রাখছে এই সূক্ষ্ম বিচারটি করার দায়িত্ব বহুক্ষেত্রে গণমাধ্যমে ওপর বর্তায়।

“সেজন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতির যে ইতিহাস সেখানে রাষ্ট্রনায়করা, রাজনীতিবিদরা ভুল করতে পারে কিন্তু গণমাধ্যমে ভুল করার কোনো অবকাশ নেই। আমরা ভুল করলে সমাজ ও গণমাধ্যম ঐক্যবদ্ধভাবে তা শুধরে দেয়। যারা অভিভাবকদের পাহারা দেয়; সেই পাহারাদার যদি ভুল করেন, তাহলে গণমাধ্যম ও গণতন্ত্র একসাথে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।”

সাংবাদিকদের প্রতি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন করার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজাকার মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কোনো ভারসাম্য বজায় রাখার কোনো দায়িত্ব গণমাধ্যমের নয়। আপনি মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজাকারকে এক পাল্লায় মাপতে পারেন না। আপনি বস্তুনিষ্ঠ হন আপনি রিপোর্ট করুণ।

“কিন্ত কখনো আমি দেখি গণমাধ্যমের ভেতরে একটি ব্যালেন্স করার প্রবণতা। গণমাধ্যমের দায়িত্ব ব্যালেন্স করা নয়, ভারসাম্য রক্ষা করাও নয়। গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ হবে, নিরপেক্ষতার নামে জঙ্গিবাদকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে এক পাল্লায় মাপার চেষ্টা করবেন না।”

বস্তুনিষ্ঠ হয়ে সরকারে ভুলত্রুটির ব্যাপারে সমালোচনামুখর হলেও রাজাকার ও মুক্তিযোদ্ধাকে এক পাল্লায় মেপে সমাজে রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করার দুষ্কর্মে কোনো গণমাধ্যম কর্মী লিপ্ত হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী ইনু।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোন খবরটির মধ্য দিয়ে নারীর সম্ভ্রম বিনষ্ট হয়, ব্যক্তির গোপনীয়তা নষ্ট হয়, শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, রাষ্ট্র নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ধ্বংস হয়, সে বিষয়টি বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনাদের।”

খুনি, সন্ত্রাসী বা জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষেও গণমাধ্যমের অবস্থান কাম্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষা ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে গণমাধ্যমকে নির্মোহভাবে কাজ করতে হবে। ধার্মিকতা বনাম সাম্প্রদায়িকতার পার্থক্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।

 গণমাধ্যমের প্রযুক্তিগত ও আইনগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিগগিরই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে বলে জানান তিনি।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উদ্যোগে ‘ম্যাপিং দ্যা টেরিয়ান অব ম্যাস মিডিয়া রিসার্চ ইন বাংলাদেশ: ক্রিটিক্যাল পার্সপেক্টিভস’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া ব্যক্তি স্বাধীনতা সম্ভব নয় মন্তব্য করে উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এই স্বাধীনতা উপভোগের পাশাপাশি গণমাধ্যমকে দায়বদ্ধ হতে হবে।দেশের গণমাধ্যম বর্তমানে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করছে। এই স্বাধীনতার কতটুকু সদ্ব্যবহার করা হচ্ছে তা এখন দেখার বিষয়। এজন্য গণমাধ্যমের আত্ম-সমালোচনা দরকার।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিভাগের অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বক্তব্য দেন।মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক মো. গোলাম রহমান।