ফুলস’ ডাইনার

এ বোকার স্বর্গ নয়, বরং বলা যায় খাবারের বাগান। কারণ বাংলায় ‘ফুল’ ইংরেজি অক্ষরে লেখার পেছনেই রেস্তোরাঁর নামের রহস্য লুকিয়ে আছে।

মিথুন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 April 2015, 02:15 PM
Updated : 20 April 2015, 02:26 PM

বনেদি পাড়ার আকর্ষণীয় কোলাহলযুক্ত বড় সড়ক থেকে পেছনে পরে থাকা সমান্তরাল ছোট রাস্তার ‘গ্ল্যামার’ বোধ হয় বিশ্বজুড়েই কম থাকে। বনানীর ১৩/বি রাস্তাও এর ব্যতিক্রম না।

তবে পথে যেতে যেতে একটি জায়গা চোখ এড়াবে বলে মনে হয় না। একটি বারান্দায় কয়েকটি চেয়ার টেবিল আর ভেতরে আলোকচিত্র বা সিলিংয়ে আলো ঝুলতে থাকা দেখে চোখ তো যেতেই পারে! আর কাচে ইংরেজিতে ‘শিশুদের’ হাতের লেখার মতো ‘ফুলস’ ডাইনার’ শব্দও চোখে লাগতে পারে।

ভেতরে ফটোসাংবাদিকতার জনক অঁরি কাখতিয়ে ব্রেঁসোর কয়েকটি ছবিও চোখে পড়তে পারে অনায়াশেই! তবে ভেতরটার সহজাত সৌন্দর্যই বেশি দাগ কাটবে। এই সৌন্দর্য ঝাঁ তকতকে নয়, এই ‘বিউটি’ দূরে ঠেলে দেওয়ার নয়।

হালকা হলুদের কয়েকটি শেইড বা ‍ক্রিম রংয়ের দেয়ালগুলোতে কিছুটা ছত্রাক বা চল্টা ওঠা চরিত্রতো আমাদের কারও কারও শোবারঘরেরই চিত্র! (অস্বীকার করলে কি সত্যতা লুকাবে?) আর ইউরোপীয় ঘরানায় এই মাধুর্যই বিমূর্ত হয়ে উঠে যেন পদে পদে এই রেস্তোরাঁয়।

মজার কথা হল যিনি সাজিয়েছেন এই মাধুর্য নকশার বিষয়ে কখনও কোনো পড়াশুনা করেননি। বরং তরুণ সাব্বির ইবনে আমিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের একটি কলেজে গণিতে ডিগ্রি নিয়েছেন। সাব্বির নিজেকে ‘মালিক’ পরিচয় না দিয়ে এই রেস্তোরাঁর নকশাকার হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এখানকার মেনুও দেখতে বেশ সাধারণ! হাতে নকশা করে ফটোকপি করা! আর মেনুর প্রথম পাতার নিচে আছে ফুলের (fool) মানে!

ভেতরে অবশ্য একটি পদ্মফুলের সঙ্গে ডাইনার লিখে একটা ছবি অবশ্য খানিকটা ‘তামাশা’রও ইঙ্গিত দেয়! চেয়ার-টেবিল বেশ সাধারণ আর নতুনের কোনো ইঙ্গিত নেই এতে। স্পেইন বা পর্তুগালের মতো দক্ষিণ ইউরোপের দেশের সমুদ্রতীরবর্তী ছোট শহরের কোনো বিস্ত্রোর আবেশ বেশ পরতে পরতে আছে এটা বলাই যায়।

আবার দেশি নকশাও আছে পুরোদমেই। যেমন সিলিংয়ে ঝুলতে থাকা ‘গরুরগাড়ির’ চাকা যেন গ্রাম বাংলাকেই মনে করায়, ঝুলছে ঘুড়ি বা কাগজ ভাঁজ করে তৈরি করা ফুল-পাখি।

টয়লেটের ভেতরে দেয়ালচিত্রতেও কিছুটা তামাশা বিদ্যমান। কোনো বাড়ির সবচাইতে পিছিয়েপড়া ঘরটিতে তামাশা জুড়ে দেওয়া আমাদের মহানগরীতে খানিকটা নতুন বিষয় বলাই যায়।  

সুশি, থাই ঘরানার সুপ, সালাদ, মাছের পদ আর বেশ কিছু রঙিন পানীয় হল এখানকার ‘মেনু ইন অ্যা নাটশেল’।

মিক্সড সুশিতে আসবে আট টুকরো। স্যামন, টুনাও থাকছে এতে আর সাইডে ওয়াসাবি সস। দাম সাড়ে ৫শ টাকা।

সিফুড সালাদ বেশ লাগবে এখানে। স্কুইড, চিংড়ি, কাঁকড়া, রেড স্ন্যাপারের পাশাপাশি টকটকে লাল রংয়ের টমেটো মন্দ নয়। মজাদার স্বাদের এই ‘স্বাস্থ্যসম্মত’ খাবারের জন্য গুনতে হবে ৩শ’ টাকা।

গ্রিল্ড বোনলেস চিকেন উইথ সেসিমি সিড একবারে খাসা! গ্রিলের গন্ধ যেমন নাশিকারন্ধ্রে ঢুকবে তেমন সেসিমি সিডের সস টসটস করে ‘বাড়ি’ দেবে জিভের গোড়ায়! ওই যে বল্লাম খাসা! সাইডে থাকছে রাইস। দেখতেও বেশ এই ডিশ।

ট্রপিক থান্ডার ড্রিংক দেখেই মনভালো হতে পারে। আনারস, লেবু, কমলালেবু আর পুদিনা মিলিয়ে বেশ এই পানীয়। দাম পঁচানব্বই টাকা।

ঘরে-বাইরে মিলিয়ে ৩৫ জনের মতো বসার ব্যবস্থা আছে।

ওয়াইফাই আছে এখানে।

ছবি: তানজিল আহমেদ জনি